Sunday, June 7, 2015

Where do our Communists stand?Why do they keep silence on this Maggie Massala diplomacy of self destruction?Or they have been really stuned by the media blitz of TOCUH ME NOT high voltage Drama?সেলিম তার ডাক নাম। পুরো নাম মুজাহিদুল ইসলাম খান। অল্প বয়সেই ‘খান’ পদবি ত্যাগ করে হয়ে উঠেছেন মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। বর্তমানে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

Where do our Communists stand?Why do they keep silence on this Maggie Massala diplomacy of self destruction?Or they have been really stuned by the media blitz of TOCUH ME NOT high voltage Drama?

History is revisited as Mukherjee and Chatterjee legacy of prepartition Hindu Mahasabha returns to provoke Hindu Imperialism ANSOLUTE with an agenda of Cent percent Akhand Hindu empire to be ruled with Manusmriti!

Yes,it is Historic ,of course and this agreement liberated the people living in enclaves as partition victims and no one might understand this better as we,the partition victim refugees resettled in India have been enclosed in that very ENCLAVE and have been deprived of civic,human rights, mother tongue,constitutional safeguard reservation,job and livelihood,history and geography in a quite degenerated humanscape subjected to continuous holocaust.

Palash Biswas

Modi in Dhaka: PM offers prayers at Dhakeshwari Temple, inaugurates six projects

Just remember Almighty Modi Maharaj visiting Pashupati Nath temple during SAARC Summit which he blasted with RSS agenda!

Thus,

Almighti PPP model Modi in Dhaka: PM offers prayers at Dhakeshwari Temple, inaugurates six projects!

Modi-Day2

Indian prime minister Narendra Modi started his second day in Dhaka by visiting Dhakeshawari temple and Ramkrishna Misssion Moth (Monastery) on Sunday.

The Indian premier first went to Dhakeshwari temple around 8:45am where he was greeted with flowers.

Modi worshiped at the temple and was presented a memorial plaque and crest there. From there, the Indian PM went to visit Ramkrishna Mission Monastery around 9:10am, where he also received a crest and memorial plaque.

Modi then went to the new Indian chancery at Baridhara Diplomatic Zone in Dhaka where he inaugurated the chancery around 9:45am.

He then unveiled plaques for the six grant-in-aid projects at the new Chancery complex at Indian High Commission here in Baridhara.

The Indian premier then presented an ambulance to Bangladesh government for helping the injured freedom fighters. He returned to Hotel Pan Pacific Sonargaon afterwards.

Modi will meet president Abdul Hamid at the Bangabhaban in the afternoon when he will receive the Independence Award on behalf of former Indian prime minister Atal Bihari Vajpayee for his outstanding contribution to Bangladesh's Liberation War.

Modi is also expected to meet former prime minister and BNP chairperson Khaleda Zia and leader of opposition in parliament Rowshan Ershad in the evening.

He will give a public speech on Bangladesh-India relations at Bangabandhu International Conference Centre.

From there, the Indian premier will move towards the airport to leave for Delhi.

Modi came to Bangladesh for a two-day visit on Saturday.

I am posting an exclusive interview! Bangladesh Communist Party President Mujahidul Islam talks in detail on burning issues faced by Communist Movement in this geopolitics.

Mr.Islam skips the aesthetics of a traditional Marxist ideologue and express his views enlightened with grass root level experiences of mass struggle in adverse situation.

Disclaimer: We have not to contradict PM claim as the Prime Minister Narendra Modi on Saturday said that history has been made as India and Bangladesh exchanged the Instruments of Ratification of the Land Boundary Agreement (LBA).

Yes,it is Historic ,of course and this agreement liberated the people living in enclaves as partition victims and no one might understand this better as we,the partition victim refugees resettled in India have been enclosed in that very ENCLAVE and have been deprived of civic,human rights, mother tongue,constitutional safeguard reservation,job and livelihood,history and geography in a quite degenerated humanscape subjected to continuous holocaust.

But History is revisited as Mukherjee and Chatterjee legacy of prepartition Hindu Mahasabha returns to provoke Hindu Imperialism ANSOLUTE with an agenda of Cent percent Akhand Hindu empire to be ruled with Manusmriti!

Since,Indian communist movement has been handed over to elite JNU return leadership in a Nation ruled by racial class hegemony and the RSS fascism is doing everything to convert the economy into a single window without grill to ensure free flow of foreign capital and foreign interest,since governance as well as economic management reduced to Hindutva Zionism Imperialist alignment against the ninety percent masses subjected to exclusion and ethnic cleansing,it would be a very good reading to understand communist movement across the political border in the single geopolitical unit which is targeted by RSS Making in Gujarat,the AKHAND Bharat.

Modi media goes all GA GA with visual Blitz of Maggie Massala diplomacy while RSS toed the political line of Hindu Mahasabha led by Shyama Prasad Mukherjee and NC Chatterjee to win Bangladesh.India sacrificed land and water resources to woo Bangladesh and this bloody PRIVATE investment by Gujarat rooted Ambani and ADANI in Bangladesh to blast ecology and environment in Sundarbans Delta to destroy nature beyond border is explained as Indian investment.

Where do our Communists stand?Why do they keep silence on this maggie Massala diplomacy of self destruction?Or they have been really stuned by the media blitz of TOCUH ME NOT high voltage Drama?


মুজাহিদুল ইসলাম খান 

সেলিম তার ডাক নাম। পুরো নাম মুজাহিদুল ইসলাম খান।

অল্প বয়সেই 'খান' পদবি ত্যাগ করে হয়ে উঠেছেন মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। বর্তমানে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনেই শুধু নয়, পুরো রাজনৈতিক অঙ্গনেই তিনি গুরুত্বপূর্ণ একজন। সম্প্রতি সংবাদ সাময়িকী 'সাপ্তাহিক'কে দেয়া দীর্ঘ এক আত্মজৈবনিক সাক্ষাৎকারে তার জীবনযুদ্ধের বিস্তারিত একটা ছবি ফুটে উঠেছে।২ সাক্ষাৎকারটি নিয়েছিলেন সহব্লগার সায়েম সাবু। ব্যস্ততা কাটিয়ে সাক্ষাৎকারটি পড়তে বসতে একটু সময় লেগে গেল। কিন্তু পড়তে বসে বুঝলাম, এতটা সময় লাগিয়ে আসলে ভুল করেছি। আরও আগেই পড়া দরকার ছিল। সাক্ষাৎকারের প্রতিটা পাতা উল্টাচ্ছিলাম আর দীর্ঘশ্বাস ফেলছিলাম– মার্কসবাদী, কমিউনিস্ট হিসেবে পরিচয়দানকারী এই লোকটি যা বলছেন, তার সঙ্গে মার্কসবাদের সম্পর্ক কোথায়! দায়িত্ব অনুভব করলাম, তার বক্তব্য ও বিভিন্ন সময় নেয়া তার পদক্ষেপগুলোকে মার্কসবাদের আলোকে ব্যাখ্যা করার।

শিরোনামটা এমন কেন? প্রথমেই ভাবতে পারেন যে কেউ! মূলত আমরা শিরোনামের মধ্যে লেখার সারবস্তুটা তুলে আনার চেষ্টা করেছি। সেলিম ভাই তার সারা জীবনের লড়াই-সংগ্রামের যে বর্ণনা দিয়েছেন, তা এক কথায় আমাদের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণই মনে হয়েছে। আর অধিকাংশতই তা মতাদর্শগত ক্ষেত্রে। সস্তা অনেক কথাই সেলিম ভাই তার সাক্ষাৎকারে বলেছেন। কমিউনিস্টমনা হওয়ার বিষয়টি স্মরণ করেছেন এভাবে– 'কৈশোর থেকেই শ্রমজীবী মানুষের প্রতি আমার বিশেষ শ্রদ্ধাবোধ কাজ করত। আমি বাজারে আসা-যাওয়ার সময় কামার-মুচির কাজ দেখতাম। আমি নিজেও সব সময় নিজের কাজ করতে ভালোবেসে এসেছি। এদিকে আমার পরিবারও ছিল কিছুটা প্রগতিমনা।' শ্রমিকশ্রেণীর কোনো পার্টির নেতাকে এভাবে নিজেকে শ্রমিকমনা প্রমাণ করার দরকার এর আগে পড়েছে কিনা, তা আমার জানা নেই। তবে এরকম বক্তব্যগুলো ধরে কথা বলতে গেলে লেখাটা কলেবরে অনেক বড় হয়ে যাবে। তাছাড়া ব্যক্তিগতভাবে নেয়ার অবকাশও থাকছে। তাই সেদিকে না গিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতেই কেবল আলোকপাত করছি।

সেলিম ভাই জানিয়েছেন, তার 'বাবা-চাচারা এক সময় মুসলিম লীগ করতেন। কিন্তু তারা মুসলিম লীগ নেতা আবুল হাশেম সাহেবের অনুসারী ছিলেন। আবুল হাশেম সাহেব ছিলেন প্রগতির ধারার একজন নেতা।' পরিবারে সাংস্কৃতিক আবহাওয়া ছিল। তার মা 'মহিলা পরিষদের জন্মলগ্ন থেকেই একজন সক্রিয় নেত্রী ছিলেন।' বাবা দুর্নীতি দমন বিভাগে চাকরি করতেন। পরিবারের সবাই মোটামুটি উচ্চশিক্ষিত। তার এক বোনজামাই ও খালাতো ভাই ছিলেন মনজুরুল আহসান খান। সেলিম ভাইয়ের আগেই যিনি সিপিবির সভাপতি ছিলেন। ছেলেবেলায় সেলিম ভাই বেতারে যেতেন আবৃত্তি ও নাটকে কণ্ঠ দেয়ার জন্য। ভালো ছাত্র ছিলেন। গণিতে ১০০ পেতেন নিয়মিত, মেট্রিকেও পেয়েছিলেন। এই তথ্যগুলো থেকে বোঝা যায় যে, একটি আধুনিক মুসলমান বাঙালী পরিবারে তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। এগুলো উল্লেখ করার কারণ হচ্ছে, হাতে গোণা কয়েকজনের কথা বাদ দিলে দেখা যাবে, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারীদের বড় অংশটিই এরকম শিক্ষিত-মধ্যবিত্ত (উঠতি বুর্জোয়া) পরিবার থেকে আসা। তাদের অনেকেই চূড়ান্ত বিচারে নিজেদের শ্রেণীঅবস্থানের সীমাটা পেরুতে পারেননি। সেলিম ভাই কতটুকু পেরেছেন, তা আমরা তার আত্মজীবনীর দিকে খেয়াল করলেই বুঝতে পারব।

। এক ।
সেলিম ভাইয়ের ছেলেবেলা সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে সাক্ষাৎকারগ্রহীতা তাকে প্রশ্ন করেছেন, স্কাউট আন্দোলনের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা নিয়ে। এ বিষয়ে তার একটি প্রশ্ন ছিল 'কেমন উপভোগ করেছেন সে আন্দোলন?' তাকে জিজ্ঞেস করে জেনেছি, সেলিম ভাই কখনও 'স্কাউট' করতেন এই তথ্য তার জানা ছিল না। আলোচনা প্রসঙ্গে সেলিম ভাই নিজেই বলেছেন। বড় সাক্ষাৎকারের ক্ষেত্রে টানা বলে যাওয়া কথাগুলোকে সুখপাঠ্য করতে সাধারণত তার মাঝে মাঝে প্রশ্ন ঢুকিয়ে দেয়া হয়, যাতে পাঠক বিরক্ত না হন। এখানেও প্রশ্নটা সে হিসেবেই এসেছে। অর্থাৎ সেলিম ভাই নিজেই স্কাউটের প্রসঙ্গ টেনেছেন। এ সম্পর্কে তার বক্তব্যটা শোনা যাক–

'স্কাউট আন্দোলন ছিল আমাদের জীবন গঠনের ক্ষেত্রে একটি বিশেষ অধ্যায়। বিশেষ আগ্রহ-উদ্দীপনা নিয়েই এই আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হই।... স্কাউট আন্দোলনের মাধ্যমেই সময়জ্ঞান সম্পর্কে বিশেষভাবে সচেতন হয়েছি, যা মুক্তিযুদ্ধের সময় এবং আমার রাজনৈতিক জীবনে গুরুত্বপূর্ণভাবে প্রভাব ফেলেছে।' এই স্কাউট আন্দোলন করতে গিয়েই তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যান ও প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সুযোগ পান। সেই অনুষ্ঠানের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, 'জন এফ কেনেডি আসলেন। কিছুক্ষণ আমাদের সঙ্গে অবস্থান করে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দিয়ে চলে গেলেন। আমার মনে আছে, আমি সেই অনুষ্ঠানেও বাঙালীর পোশাক পায়জামা-পাঞ্জাবি পরে ছিলাম। পোশাকের মাধ্যমেও আমি আমার দেশের পরিচয় তুলে ধরার চেষ্টা করি। এ নিয়ে অনেকেই আমাকে অনেক প্রশ্ন করেছেন। কিন্তু তাতে কান দেইনি।'

এখানে দুটো ব্যাপার স্পষ্ট হয়েছে। প্রথমটি হচ্ছে, মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম 'স্কাউট' বিষয়টিকে এখনও ধারণ করেন। এটা তার প্রশংসাসূচক বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট। 'স্কাউট' প্রসঙ্গে সেলিম ভাইয়ের এহেন বর্ণনা নিঃসন্দেহে তার অনুসারীদের এর দিকে আগ্রহী করবে। কিন্তু স্কাউট আসলে কার সেবা করে? কেন-কবে এটা তৈরী হয়েছে, তা সেলিম ভাইয়ের অজানা থাকার কথা নয়। স্কাউট বিশ্বব্যাপী একটি যুব সংস্থা। ১৯০৭ সালে লর্ড ব্যাডেন পাওয়েল এর সূচনা ঘটান। তিনি ছিলেন ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত লেফটেনেন্ট জেনারেল। বর্তমানে পৃথিবীর ২১৭ টি দেশে ৩ কোটি ৮০ লাখ স্কাউট ও গাইড বিভিন্ন স্কাউটিং সমিতির প্রতিনিধিত্ব করছে। বলা হয়, এর লক্ষ্য যুবকদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ, যাতে তারা সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে।৩

কিন্তু আমরা জানি, গত শতকের গোড়ার দিকে যখন দুনিয়াজোড়া কমিউনিস্ট আন্দোলন চাঙা হতে শুরু করল, রুশ বিল্পবের দামামা বেজে উঠল, ঠিক তখনই ব্রিটিশ সেনাবাহিনী– যারা কিনা তখন পৃথিবীর অধিকাংশ স্থান দখল করে রেখেছে– দেশে দেশে স্কাউটিং রপ্তানি করতে শুরু করল। যাতে তরুণদের বিপ্লবী চেতনাকে অথর্ব বুর্জোয়া মানবতাবাদের দিকে চালিত করা যায়। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীরা তাদের সাম্রাজ্যের আগা-মাথাজুড়ে স্কাউটের পৃষ্ঠপোষকতা করল এবং এখনও করে চলেছে। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের কাছ থেকে দুনিয়ার দখল যখন মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীদের হাতে গেল, তারা আগ্রহভরেই স্কাউটের পৃষ্ঠপোষকতার দায়িত্ব নিল।

স্কাউট কী করে? কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পশ্চিমা মনোভাবাপন্ন করে ও তাদের প্রতি উচ্চধারণা পোষণ করতে শেখায়। তারা দুঃস্থকে সাহায্য করতে বলে! কিন্তু তার গরিবিয়ানার কারণ কি, তা নির্দেশ করে না। ছাত্র-তরুণদের অর্থহীন অনেক কাজের মধ্যে বেঁধে ফেলে, তাদের সংগ্রামী স্পৃহাকে ধ্বংস করে দেয়। দৃশ্যমান অর্থে স্কাউট আমাদের মতো দেশের ক্ষেত্রে পশ্চিমা আচরণ শেখানোর কারনে কতকটা প্রগতিশীল মনে হলেও, আসলে তা নয়। এটা ব্রিটিশের সেবা করতে শিখিয়েছে বলেই ব্রিটিশ এর পৃষ্ঠপোষকতা করেছে। মার্কিনের নেতৃত্বাধীন সাম্রাজ্যবাদও সেই দায়িত্ব পালন করে চলেছে একই সূত্রে।

নিজ দেশের রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেয়া, মার্কিন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ– এরকম বিভিন্ন উপায়ে স্কাউট ছাত্র-তরুণদের বুর্জোয়া রাষ্ট্রের অনুগামী ও পক্ষের শক্তি করে গড়ে তোলে। সেলিম ভাইয়ের বক্তব্যে এই দিকটা আসেনি। বরং তিনি স্কাউটকে ধারণ করেছেন ও তার প্রশংসা করেছেন। স্কাউট দিয়ে নিপীড়িত মানুষের সংগ্রাম দমনে সাম্রাজ্যবাদ যে ফাঁদ পেতেছে, তার কাছে অসহায়ভাবে আত্মসমর্পণ করেছেন।

আর দ্বিতীয় যে বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে তা হলো, সেলিম ভাই আজও পায়জামা-পাঞ্জাবি পরেন! ছেলেবেলা থেকে অদ্যাবধি তার বাঙালী পোশাক পরার অভ্যাস। কিন্তু পায়জামা-পাঞ্জাবি আদৌ বাঙালীর পোশাক কি? পাঞ্জাবি জিনিসটা পাঞ্জাব থেকে এসেছে। এটা আমাদের অঞ্চলের সামন্তপ্রভুরা পরতে শিখেছে তুর্কিদের প্রভাবে। তুর্কিরা বাঙালীর পোশাকরুচি বেশ খানিকটা প্রভাবিত করেছিল।৪ আর পায়জামা শব্দটি ফার্সী।৫ সম্প্রতি গবেষকরা চীনে ৩ হাজার বছরের পুরনো একটি কবরে পায়জামা আবিষ্কার করেছেন।৬ সুতরাং এগুলোকে বাঙালী পোশাক আদৌ বলা যায় কিনা, তা প্রশ্নবিদ্ধ।

তবে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ছেলেবেলায় তার এই বাঙালী পোশাক পরে বিদেশীদের যে বার্তা দিতে চেয়েছিলেন, এখনও কি তাই করে চলেছেন? ছেলেবেলায় তিনি বাঙালী পোশাক পরে বাঙালী জাতীয়তাবাদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। সারা জীবন সেটা ধরে রেখেছেন। জাতীয়তাবাদী অবস্থান তিনি আর ত্যাগ করতে পারেননি। কেবল পাঞ্জাবি-পায়জামা পরিধানের কারণে এরকম অভিযোগ তার বিরুদ্ধে আনা যায় কিনা, তা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলবেন। এক্ষেত্রে আমরা কমিউনিস্ট আন্দোলনের প্রধান বক্তাদের একজন, লেনিনকে উদ্ধৃত করতে চাই।

লেনিন তার 'জাতীয় সমস্যার সমালোচনামূলক মন্তব্য' প্রবন্ধে বলেছেন, "সমস্ত রকমের জাতীয় অত্যাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম- তা অবশ্যই হ্যাঁ। যত রকম জাতীয় বিকাশ এবং সাধারণভাবে 'জাতীয় সংস্কৃতি'র জন্য সংগ্রাম- অবশ্যই না।" তাহলে? সেলিম ভাই যে, সারাজীবন ধরে পাঞ্জাবি-পায়জামা বয়ে বেড়ালেন, পোশাকের মাধ্যমে জাতীয় সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব করে চললেন, তা কি মার্কসবাদসম্মত? মতাদর্শিক দৈন্যতা এক্ষেত্রে তাকে জাতীয়তাবাদের কাছে পরাস্ত করেছে।

। দুই ।
সেলিম ভাই ১৯৬৫ সালে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। তখন তারা একটি পাঠচক্রদল করতেন। মার্কসবাদের চিরায়ত সৃষ্টিগুলো তখনই পাঠ করতে শুরু করেন। তার ভাষায়, 'আমি সোভিয়েত পাবলিকেশন থেকে অল্প টাকায় কার্ল মার্ক্সের 'ডাস্ ক্যাপিটাল' বইয়ের অনুবাদ গ্রন্থটি সংগ্রহ করি এবং প্রথম বর্ষেই তার প্রথম খণ্ডটির পাঠ শেষ করি। এর মাধ্যমে মার্কসবাদ আমার কাছে আরও পরিষ্কার হতে থাকে।'

ঠিক তখনই চলছিল মার্কসবাদ নিয়ে দুনিয়াজোড়া আলোড়নকারী এক বিতর্ক। সারা দুনিয়ার মার্কসবাদীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছিলেন মূলত একটি প্রশ্নের সমাধানে– মার্কসবাদ আসলে কোনটি? সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টি ও চীনের কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে এই বিতর্ক চলছিল। ইতিহাসে এই বিশাল তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনাবলী 'আন্তর্জাতিক মতাদর্শগত মহাবিতর্ক' নামে পরিচিত। ১৯৬৩ সালে পরিপক্ক হওয়া এ বিতর্ক ১৯৬৫ সালের গোড়ায় এসে পরিণতির পথে এগুতে থাকে। যার রেশ ধরেই বিভক্ত হয়ে পড়ে সারা দুনিয়ার অধিকাংশ কমিউনিস্ট পার্টি। যখন সেলিম ভাইয়ের কাছে মার্কসবাদ 'পরিষ্কার' হচ্ছিল! দেখা যাক, তিনি মার্কসবাদ থেকে কী পেলেন? তবে তার আগে পাঠকদের সঙ্গে মহাবিতর্কের মূল বিষয়টার সঙ্গে সংক্ষেপে পরিচিতি ঘটিয়ে দেয়াটা আবশ্যক। নইলে পরবর্তী বক্তব্য বুঝতে কারো কারো অসুবিধা হতে পারে।

মহাবিতর্কের প্রধান বিষয়গুলো ছিল স্ট্যালিন প্রসঙ্গ, সোভিয়েত পার্টির প্রস্তাবিত শান্তিপূর্ণ উত্তরণ ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান তত্ত্ব– তথা সর্বহারার একনায়কত্ব ও বিপ্লবের পথ সংক্রান্ত প্রসঙ্গ, আন্তর্জাতিক শ্রমিকশ্রেণীর সম্পর্ক প্রসঙ্গ। ওই বিতর্কে সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির মৌলিক মতামতগুলো ও তার বিপরীতে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির বক্তব্যগুলো ও মার্কস-লেনিনের কিছু উদ্ধৃতি যোগ করছি। যাতে পুরো বিষয়টা বুঝতে পাঠকের জন্য সহজ হয়।

তখন সর্বহারাশ্রেণীর একানায়কত্বের প্রশ্নটিকে বাতিল করে দিয়ে সোভিয়েত পার্টি তাদের একটি দলিলে দাবি করে– "কোনো সমাজেই অপরাধীরা একটি শ্রেণী নয়। একথা স্কুলের ছেলেরাও জানে। সমাজতান্ত্রিক সমাজে অবশ্যই এরা শ্রেণী বলে গণ্য হতে পারে না। এরা সব হচ্ছে পুঁজিবাদের জেরেরই প্রকাশ। এই জাতীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে সংগ্রামের জন্য সর্বহারার একনায়কত্বের দরকার নেই।"৭ একই দলিলে তারা আরও বলেন, "সমাজতন্ত্রের জয়লাভের পর, যখন কেবলমাত্র শ্রমজীবী জনসাধারণ- বন্ধুভাবাপন্ন কয়েকটি শ্রেণী, যাদের প্রকৃতি সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তিত হয়ে গেছে- শুধু রয়েছে সমাজে এবং দাবিয়ে রাখার মতো কেউই নেই- তখনসর্বহারার একনায়কত্বের প্রয়োজন দূর হয়ে যায়।"৮

চীনের কমিউনিস্ট পার্টি এ প্রসঙ্গে বলে, "মার্কসবাদী-লেনিনবাদীদের মতে, শ্রেণীনিরপেক্ষ রাষ্ট্র বলে কিছু নেই। যতদিন রাষ্ট্রের অস্তিত্ব থাকছে, ততদিন তার শ্রেণীচরিত্রও থাকতে বাধ্য। যতকাল রাষ্ট্রের অস্তিত্ব বর্তমান, ততদিন সমগ্র জনগণের রাষ্ট্র বলে কিছু থাকতে পারে না। শ্রেণীহীন সমাজের আবির্ভাবের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রের অবলুপ্তি ঘটবে।"৯ একই প্রসঙ্গে কমরেড লেনিন তার 'রাষ্ট্র ও বিপ্লব' বইত বলেছেন, "রাজনৈতিক রূপান্তরের একটি পর্যায় অতিক্রম না করে সাম্যবাদের দিকে ক্রমবিকাশমান পুঁজিবাদী সমাজের পক্ষে সাম্যবাদী সমাজে উত্তরণ কখনই সম্ভব নয়, এই সময়ে রাষ্ট্রের একমাত্র রূপ হতে পারে সর্বহারাশ্রেণীর বিপ্লবী একনায়কত্ব।"১০ সর্বহারার মহান শিক্ষন কমরেড কার্ল মার্কস এ প্রসঙ্গে তার 'গোঁথা কর্মসূচীর সমালোচনা' শীর্ষক রচনায় বলেন, "পুঁজিবাদী সমাজ ও সাম্যবাদী সমাজের মাঝখানের সময়টি হচ্ছে একটি সমাজ-ব্যবস্থা থেকে আরেকটি সমাজব্যবস্থার যুগ। এর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে চলে আরেকটি রাজনৈতিক রূপান্তরের প্রক্রিয়া, যাতে রাষ্ট্র সর্বহারা বিপ্লবী একনায়কত্ব ছাড়া আর কিছুই হতে পারে না।"১১

ক্রুশ্চভ ২০তম কংগ্রেসের প্রতি তার গোপন রিপোর্টে 'ব্যক্তিপূজা নির্মূল করার' অজুহাতে স্ট্যালিনকে নস্যাৎ করে দেন। তিনি বলেছিলেন, স্ট্যালিনের ছিল 'অত্যাচারের এক বিকৃত মানসিকতা', তিনি চালাতেন 'নৃশংস যথেচ্ছাচার', বেছে নিয়েছিলেন 'গণনির্যাতন ও অত্যাচারের পথ', 'দেশকে ও কৃষিকে জানতেন চলচ্চিত্রের মাধ্যমে', 'যুদ্ধ পরিকল্পনা করতেন গ্লোব সামনে রেখে', তার নেতৃত্ব ছিল 'সোভিয়েত সমাজ বিকাশের পথে একটি বিরাট প্রতিবন্ধক', ইত্যাদি।১৫

ওই রিপোর্টে দুনিয়ার পরিস্থিতির 'মৌলিক পরিবর্তন' ঘটে গেছে দাবী করে ক্রুশ্চভ 'শান্তিপূর্ণ উত্তরণ'-এর তত্ত্ব হাজির করেন। তিনি বলেছিলেন, 'নির্দিষ্ট ঐতিহাসিক পরিস্থিতিতে' অক্টোবর বিপ্লবের পথই ছিল একমাত্র সঠিক পথ। কিন্তু পরিস্থিতির পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের ক্ষমতা এতটাই সংহত হয়েছে যে, এখন 'সংসদীয় পথে' পুঁজিবাদ থেকে সমাজতন্ত্রে উত্তরণ ঘটানো সম্ভব হয়ে উঠেছে। ওই রিপোর্টে 'শান্তিপূর্ণ উত্তরণ'কে বর্ণনা করা হয়- 'পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন এবং পার্লামেন্টকে বুর্জোয়া একনায়কত্বের হাতিয়ার থেকে জনগণের প্রকৃত রাষ্ট্রক্ষমতার হাতিয়ারে রূপান্তর' হিসেবে।১৬

১৯৫৭ সালের নভেম্বরে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি 'শান্তিপূর্ণ উত্তরণের প্রশ্নে মতামতের রূপরেখা' শীর্ষক দলিলটি সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রতিনিধির হাতে তুলে দেন।১৭ তাতে বলা হয়, "বুর্জোয়াশ্রেণী ইতিহাসের মঞ্চ থেকে স্বেচ্ছায় নেমে যাবে না। এটা হচ্ছে শ্রেণীসংগ্রামের একটি বিশ্বজনীন নিয়ম। কোনো দেশেই সর্বহারাশ্রেণী ও কমিউনিস্ট পার্টিকে বিপ্লবের জন্য তাদের প্রস্তুতিকে সামান্যতমও শিথিল করলে চলবে না। সব সময়েই তাদেরকে প্রতিবিপ্লবী আক্রমণকে প্রতিহত করার জন্য, এবং শ্রমিকশ্রেণী যখন রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করছে, তখনকার সেই সঙ্কটপূর্ণ সন্ধিক্ষণে বুর্জোয়ারা জনগণের বিপ্লবকে দমন করার উদ্দেশে সশস্ত্র শক্তির সাহায্য নিলে (সাধারণভাবে বলতে গেলে, অনিবার্যভাবেই তারা যেটা করবে), সশস্ত্র শক্তির সাহায্যে তাদের উৎখাত করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।"১৮ এ প্রসঙ্গে কমরেড লেনিনের শিক্ষা হচ্ছে, "সর্বহারাশ্রেণী যখন বুর্জোয়া শ্রেণীকে নিরস্ত্র করতে পারবে, কেবল তখনই সর্বহারাশ্রেণীর পক্ষে তার বিশ্ব ঐতিহাসিক দায়িত্বের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা না করেই সমস্ত অস্ত্রশস্ত্র জঞ্জালস্তূপে নিক্ষেপ করা সম্ভব হবে, এবং সর্বহারাশ্রেণী নিঃসন্দেহেই তা করবে। কিন্তু সে কেবল যখন এই শর্তটি পূর্ণ হবে তখনই, এবং নিশ্চয়ই তার আগে নয়।"১৯

স্ট্যালিন প্রসঙ্গে চীনের পার্টি বলে, "স্ট্যালিনের জীবন ছিল মহান এক মার্কসবাদী-লেনিনবাদীর জীবন, মহান এক সর্বহারা বিপ্লবীর জীবন। লেনিনের মৃত্যুর পর গত ৩০ বছর ধরে স্ট্যালিন ছিলেন সিপিএসইউ ও সোভিয়েত সরকারের সর্বাগ্রগণ্য নেতা, এবং একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনের স্বীকৃত নেতা ও বিশ্ব বিপ্লবের পতাকাবাহক। তার জীবদ্দশায় স্ট্যালিন কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভুল করেছিলেন বটে, কিন্তু তার মহান ও নিপুণ কর্মধারার তুলনায় তার ভুলগুলো ছিল গৌণ।"২০

সোভিয়েত পার্টির প্রবণতা সম্পর্কে বলতে গিয়ে চীনা পার্টি বলে, "যদি কোনো পার্টির নেতৃত্ব অ-বিপ্লবী নীতি গ্রহণ করে পার্টিকে সংস্কারবাদী পার্টিতে পরিণত করে ফেলেন, তাহলে ভেতরের ও বাইরের মার্কসবাদী-লেনিনবাদীরা তাদের সরিয়ে দিয়ে জনগণকে বিপ্লবের পথে পরিচালিত করবেন। অন্য ধরণের পরিস্থিতিতে, বুর্জোয়া বিপ্লবীরাই বিপ্লবকে পরিচালিত করতে এগিয়ে আসবে এবং সর্বহারা শ্রেণী বিপ্লবের নেতৃত্ব হারিয়ে ফেলবে। যখন প্রতিক্রিয়াশীল বুর্জোয়ারা বিপ্লবের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করে জনগণের ওপর অত্যাচার চালায়, তখন যে কোনো সুবিধাবাদী লাইন কমিউনিস্ট ও বিপ্লবী জনগণের শোচনীয় পরিণতি এবং অপ্রয়োজনীয় ক্ষয়ক্ষতি ডেকে আনে। যদি কমিউনিস্টরা সুবিধাবাদের পিচ্ছিল পথে অগ্রসর হতে থাকে, তাহলে তারা ক্রমশ বুর্জোয়া জাতীয়তাবাদে অধঃপতিত হবে এবং সাম্রাজ্যবাদী ও প্রতিক্রিয়াশীল বুর্জোয়াদের তাঁবেদার হয়ে দাঁড়াবে।"২১

অত্যন্ত সঠিক এই মূল্যায়ন পরবর্তীতে মস্কোপন্থী সবগুলো পার্টির ক্ষেত্রেই ক্রিয়াশীল হতে দেখা যায়। এমনকি চীনের পার্টিও যখন মাও সেতুঙ-এর মৃত্যুর পর শোধনবাদী লাইন গ্রহণ করে, তারাও এই গাড্ডায় ভেসে যায়। আমাদের দেশের পার্টি তো হুবহু এই পরিণতি ভোগ করে একাত্তরে। তাদের সুবিধাবাদের দরুণ বুর্জোয়ারা কর্তৃত্ব দখল করে। ফলে কমিউনিস্ট ও বিপ্লবী জনগণের শোচনীয় পরিণতি বরণ করতে হয় এবং অপ্রয়োজনীয় ক্ষয়ক্ষতি চেপে বসে পার্টি ও জনগণের ওপর।

বিতর্ক শুরু হওয়ার পর মতপার্থক্যকে আরও গভীর না করে সোভিয়েত পার্টি সমঝোতার অমার্কসবাদী লাইনে এগুতে চায়। ১৪ জুলাই, ১৯৬৩'র দলিলে তারা বলেন, "কমরেড এন. এস. ক্রুশ্চভ কমরেড লিউ শিয়াওকে মাও সে তুং-এর কাছে আমাদের এই প্রস্তাব পেশ করতে বলেন, 'আমাদের সমস্ত বিরোধ ও মতপার্থক্য ঝেড়ে ফেলা হোক, কে ঠিক, কে ভুল তা প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা না করে অতীত খুঁচিয়ে না তুলে নতুন করে আমাদের সম্পর্ক শুরু করা হোক'।"২২ কিন্তু চীনের পার্টি এই হঠকারী লাইন পরিত্যাগ করে মার্কসবাদের আলোকে দ্বিমতকে মোকাবেলা করার পথে এগোয়। যার সূত্র ধরে সারা দুনিয়ার কমিউনিস্ট আন্দোলন বিভক্ত হয়ে পড়ে।

এদেশেও তখন কমিউনিস্ট আন্দোলনে ভাঙন দেখা দেয়। এ বছরেই ছাত্র ইউনিয়ন ভাগ হয়ে মতিয়া গ্রুপ এবং মেনন গ্রুপ হয়। সেলিম ভাই তখন কী করলেন? আসুন, তার কাছ থেকেই শুনি-
'আমরা দুই পক্ষের সঙ্গেই যোগাযোগ রক্ষা করতে থাকলাম। দুই পক্ষেরই কথা শুনলাম। চিন্তা করে দেখলাম, মেনন গ্রুপ যে কথাগুলো বলছে তা ত্রুটিপূর্ণ এবং যুক্তিসঙ্গত নয়। মতিয়াপন্থি নামে পরিচিত গ্রুপের প্রধান নেতা ছিলেন সাইফুদ্দিন মানিক। আমরা সেই সংগঠনের সঙ্গে কাজ করতে শুরু করি।... ওই সময়ে সমাজতন্ত্র নিয়ে সারা বিশ্বেই ঝড় বইছে। এই হাওয়া পূর্ব পাকিস্তানেও বইছে। সমাজতন্ত্র কায়েমে রাশিয়া এগিয়ে না চীন এগিয়ে, এমন বিতর্ক সর্বত্রই। আমরাও এই বিতর্কে শরিক হতাম। চীনের বিপ্লবী আওয়াজ, গেরিলাযুদ্ধ আমাদেরকে বিশেষভাবে আকর্ষণ করতো। একদিন এসএম হলে মান্নান ভূঁইয়ার কক্ষে মেননপন্থিরা দেশের রাজনীতি নিয়ে আলোচনার জন্য আমাদের ৩-৪ জনকে ডেকে নেন। আলোচনায় নানা বিষয় উঠে আসে। কিন্তু এর মধ্যে দুটি বিষয় আমাদের কাছে আপত্তিকর মনে হয়। একটি হলো, মেননপন্থিরা মনে করেন আইয়ুব খান সাম্রাজ্যবাদবিরোধী কাজ করছে। আরেকটি হচ্ছে, আইয়ুব খান যেহেতু সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সুতরাং আইয়ুব খানকে ডিস্টার্ব (বিরক্ত) করা ঠিক হবে না। তাদের বক্তব্য অনেকটা ছিল 'ডোন্ট ডিসটার্ব আইয়ুব' ধরনের। এই যুক্তি দিয়ে তারা আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও দেশের রাজনীতি বোঝানোর চেষ্টা করলেন যা আমাদের কাছে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হয়নি। এ কারণেই মেননপন্থিদের সঙ্গে আর যাওয়া হয়নি।' আমাদের মধ্যে 'কেউ কেউ মেননপন্থি হয়েও কাজ করতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু ১৯৬৫ সালে যখন পাক-ভারত যুদ্ধ শুরু হয় তখন মেননপন্থিরা যুদ্ধ বন্ধ বা শান্তির সপক্ষে অবস্থান নেয়ার পরিবর্তে ভারতবিরোধী শ্লোগান দিয়ে ভারত ধ্বংসের পক্ষে অবস্থান নেন। তাদের অনেকেই 'ক্রাশ ইন্ডিয়া' শ্লোগান দিয়ে মাঠ গরম করতে শুরু করেন। মেননপন্থিদের এই অবস্থানকে আমাদের কাছে খুবই বিতর্কিত মনে হয়েছে। এ কারণেই আমরা আর তাদের সঙ্গে রাজনীতি করিনি।'

এজন্যই আন্তর্জাতিক মতাদর্শগত মহাবিতর্ক সম্পর্কে এর আগে এতগুলো কথা বলেছিলাম। একাদশ শ্রেণীতেই 'ডাস্‌ ক্যাপিটাল' পড়ে মার্কসবাদ পরিষ্কারভাবে বোঝা সেলিম ভাই মতাদর্শগত বিতর্কে পক্ষ নিলেন কিসের নিমিত্তে? বিতর্ক হচ্ছিল মার্কসবাদ নিয়ে, আর তিনি সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন আইয়ুবকে সমর্থন করা হলো কিনা, তার ভিত্তিতে? তার বক্তব্য শুনে মনে হতে পারে, যেন চীন-সোভিয়েতের মহাবিতর্ক চলছিল আইয়ুবের প্রশ্নে! যদি এদেশের চীনপন্থিরা আইয়ুব প্রশ্নে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন, কিংবা চীনের পার্টি ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে মনে হয়, তাহলে কি মার্কসবাদ প্রশ্নে দীর্ঘদিন ধরে চলা মহাবিতর্ক বাতিল হয়ে যায়? একজন মার্কসবাদী হিসেবে সেলিম ভাইয়ের কি তখন মার্কসবাদের পক্ষে ও ভুল মতের বিপক্ষে অবস্থান নেয়া যৌক্তিক ছিল না? তার বক্তব্য অনুযায়ী তিনি একটা ভুল মতের বিরুদ্ধেই কেবল দাঁড়িয়েছেন, তা হলো মেননপন্থিদের 'ভারতবিরোধী শ্লোগান দিয়ে ভারত ধ্বংসের পক্ষে অবস্থান' নেয়ার বিরোধিতা! আন্তর্জাতিক বিতর্কে মার্কসবাদ প্রসঙ্গে তার কোনো অবস্থান তখন ছিল না। অর্থাৎ মহাবিতর্কের ক্ষেত্রে তিনি যা করেছেন, তার সঙ্গে মার্কসবাদী চেতনার কোনো সম্পর্ক দেখা যাচ্ছে না। এক্ষেত্রেও বুর্জোয়া জাতীয়তাবাদের কাছে তিনি অসহায় আত্মসমর্পণ করেছেন, মার্কসবাদের ঝান্ডা হাতে এগিয়ে যেতে পারেননি।

। তিন ।
সেলিম ভাই তার সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ভাসানীর নেতৃত্বে ন্যাপ গঠনের পর, 'পরবর্তী ইতিহাস যদি সেই ধারাতেই এগিয়ে যেত তাহলে স্বাধিকার আন্দোলনে বামপন্থিরাই নেতৃত্বে থাকত।' সেই গতি ব্যহত হওয়ার কারণটা তিনি ব্যাখ্যা করেন এভাবে– 'এরূপ হয় ষাটের দশকের মাঝামাঝি সময় কমিউনিস্ট পার্টি ও বামপন্থি সংগঠনগুলোর মধ্যে সৃষ্ট বিভেদের কারণে। ছাত্র ইউনিয়ন ভাগ হয়। ন্যাপ ভাগ হয়। খোদ কমিউনিস্ট পার্টি থেকেও একটি অংশ বেরিয়ে গিয়ে আলাদা পার্টি করে। এর মধ্যে চীনপন্থি কমিউনিস্টরা মনে করলেন, আইয়ুব শাসনের বিরোধিতা (ডোন্ট ডিস্টার্ব আইয়ুব নীতি) করা ঠিক হবে না। এমন অবস্থায় কমিউনিস্টরা দুর্বল হয়ে পড়ে। অনেকে পথভ্রান্তও হয়।'

অর্থাৎ মার্কসবাদ প্রশ্নে আন্তর্জাতিক বিতর্ক গভীর হওয়াটাকে তিনি ভুল হিসেবে মূল্যায়ন করছেন। সোভিয়েত পার্টির অন্যায় বলয় ভেঙে মার্কসবাদের পক্ষে বিদ্রোহ করাটাকে তিনি বাতিল করে দিচ্ছেন। এর অর্থ দাঁড়ায়, তিনি নিজে যেমন ওই বিতর্কের অংশীদার হননি, তেমনি চেয়েছেন ওই বিতর্কে না গিয়ে ঐক্যটাকে ধরে রাখতে। মোটকথা, ক্রুশ্চভের সেই সমঝোতার লাইনেই হেঁটেছেন তিনি। যেখানে ক্রুশ্চভ প্রস্তাব করেছেন, মতপার্থক্য ভুলে গিয়ে এক হয়ে যেতে! সারবস্তুতে যার অর্থ মার্কসবাদ ত্যাগ করা ছাড়া কিছুই নয়।

শক্তিক্ষয়ের জন্য কমিউনিস্টদের সুবিধাবাদকে দায়ী না করে সেলিম ভাই বিভাজনকে, বিদ্রোহকেই দায়ী করলেন– 'স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধিকারের প্রশ্নে বামপন্থিরাই সবচেয়ে সরব ও প্রত্যয়ী ছিল এবং স্বাধিকার আন্দোলনে নেতৃত্ব তাদেরই দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু ষাটের দশকে বামপন্থিদের বিভাজন এবং একটি অংশের আইয়ুবপ্রীতির কারণে নেতৃত্ব চলে যায় আওয়ামী লীগ তথা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের হাতে।' এটা একটা অবাক করা বিষয়। শ্রমিকশ্রেণীর পার্টি, কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি হয়েও তিনি শেখ মুজিবকে 'বঙ্গবন্ধু' দাবী করছেন। যা এমনকি বিরোধীপক্ষের বুর্জোয়ারাও করে না। একজন মার্কসবাদী হিসেবে তিনি কি কখনও গভীরভাবে ভাবেননি, শেখ মুজিব কি আসলে বঙ্গদেশের জনগণের বন্ধু? নাকি শেখ মুজিব এ অঞ্চলের ধনীকশ্রেণী ও ভারতীয় শাসকশ্রেণীর বন্ধু? বুর্জোয়া শাসকশ্রেণীর প্রাণপুরুষটি কিভাবে জনগণের বন্ধু হয়?

যার কাজ শোষণ ও বৈষম্যের রাস্তা প্রস্তুত করা, তাকে বঙ্গদেশের মার্কসবাদী পার্টির একজন নেতা বলছেন 'বঙ্গবন্ধু'? মার্কসবাদের সাধারণ অনুসিদ্ধান্তগুলোই তো বাতিল হতে বসল। শেখ মুজিব নিঃসন্দেহে বিরাট রাজনীতিবিদ। কিন্তু তাকে ওই উপাধিটা এমন কেউ দেননি যাকে মানা যায়। উপাধিটা তাকে দিয়েছেন তার দলেরই এক পান্ডা, তোফায়েল আহমেদ। যিনি এখনও আওয়ামী লীগের সব অপকর্মকে অম্লান বদলে হালাল করছেন, বৈধতা দিচ্ছেন। লুটপাটের এই তল্লাটে ভোগ করছেন মন্ত্রীত্বের সুধা! এমন নীতিহীন কেউ তার গুরুকে সম্মাননা দিচ্ছেন– এটা জাতির জন্য খুবই অগুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়।

সেলিম ভাই এই সাক্ষাৎকারে মজার একটা তথ্য দিয়েছেন। যার সঙ্গে সিপিবির পুরো ইতিহাসটা অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। বলেছেন, ৬ দফা দাবীতে শেখ মুজিবের ডাকা ৭ জুনের হরতালে পিকেটিং করতে গিয়েই তিনি জীবনে প্রথম জেল খাটেন! সেই ধারাবাহিকতা আজো ক্ষুণ্ন হয়নি। সিপিবি আজো আওয়ামী লীগের হয়ে বেগার খাটছে। মাঝে তো তাদের অংশই হয়ে গিয়েছিল। আর এসবের জন্য, তার সংগঠন পিছিয়ে পড়ার জন্য তিনি বারবার দায়ী করেছেন আন্তর্জাতিক মতাদর্শগত মহাবিতর্কের ফলে সৃষ্ট বিভাজনকে।

তিনি বলেন, 'চীন-রাশিয়ার মধ্যে সৃষ্টি হওয়া আদর্শগত বিরোধের ধাক্কায় ১৯৬৫ সালে ছাত্র ইউনিয়ন বিভক্ত হয়ে পড়ে। সে কারণে ছাত্র ইউনিয়ন দুর্বল হয়ে পড়েছিল।' বিভাজন ছাড়া নিজেদের কোনো ভুল তিনি দেখতে পাননি। বিভাজনকে ভুল মনে করলেও তিনি কিন্তু বিভাজিতই হয়েছেন। স্বাভাবিকভাবে বিভাজনের বিপক্ষে হলে তার উচিত ছিল চীন-রাশিয়া, দুপক্ষকেই ত্যাগ করা। কিন্তু তিনি রাশিয়ার পক্ষে থেকেছেন। কেন? সোজা উত্তরটা হবে এস্টাবলিশমেন্ট। রাশিয়া তখন তার পক্ষের দলগুলোকে নগদ টাকা থেকে শুরু সবকিছুই দিতো। পার্টির সুপারিশ নিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য যাওয়া যেত রাশিয়ায়। কোনো সুবিধা না নিলেও রাশিয়ার প্রভাব বলয়ে থাকার তাড়না আসতো মাথার ভেতর গেঁড়ে থাকা এস্টাবলিশমেন্ট থেকে। সেলিম ভাই যখন ছাত্র রাজনীতিতে ভীষণ ব্যস্ত, তখনও তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়েছেন। এটাও এস্টাবলিশমেন্ট। যুদ্ধ বা বিপ্লব, ষাট দশকের উত্তাল দিনগুলোর মধ্যেও তিনি ভালো ছাত্রের প্রমাণ রাখছেন। শিক্ষা ব্যবস্থাকে তখনও নিশ্চয়ই গালি দিতেন, কিন্তু তার পরেও যেহেতু প্রথমশ্রেণী পেয়েছেন, সুতরাং বোঝাই যায় কেন বিভাজন না মেনেও তিনি মস্কোপন্থী!

। চার ।
শেখ মুজিবের প্রতি সেলিম ভাইয়ের মধ্যে যে এক ধরণের মোহাবিষ্টতা কাজ করে, এটা তার বক্তব্য থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়– 'ছয় দফাকে কেন্দ্র করে জাগরণ ঘটে গিয়েছিল। তার সঙ্গে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার ঘটনা যুক্ত হলো। শেখ মুজিবকে এই মামলার প্রধান আসামি করায় জনমতের জোয়ার আওয়ামী লীগের পক্ষে চলে যায়। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার ঘটনায় শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান নেতা হয়ে উঠলেন। জনগণের আবেগও তখন শেখ মুজিবের দিকে। এসব কারণে ছাত্রলীগ আলাদা করে পালে হাওয়া পেতে শুরু করলো।... এসবের মধ্য দিয়ে শেখ মুজিবের স্বতন্ত্র ইমেজ ও অবস্থান সামনে এসে গেল। আগেই বলেছি, সংকটময় মুহূর্তে হাতের জামা গুটিয়ে শেখ মুজিব যথা সময়ে যথা সিদ্ধান্ত নিতেন, যা অন্য দল বা নেতাদের মধ্যে সেভাবে ছিল না। যদিও ভাসানীর মধ্যে তা আরও বেশি পরিমাণে ছিল, কিন্তু তার ভুল রাজনৈতিক লাইনের কারণে শেখ মুজিবের প্রতি মানুষের আকর্ষণ ভাসানীকে ছাপিয়ে বড় হয়ে উঠল।'

বুর্জোয়া শাসকের প্রতি কমিউনিস্ট নেতার এই মনোভাব কি তাকে কখনও লড়াইয়ের ময়দানে সামনে এগিয়ে যেতে দিবে? রণনীতির দিক থেকে কেউ যদি শত্রুকে বড় করে দেখেন, তিনি সেই লড়াইয়ে জয়ী হতে পারবেন না, এটাই সাধারণ নিয়ম। কারণ মনস্তাত্ত্বিকভাবে তিনি আগেই হেরে বসে আছেন। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক লাইনের বাইরে গিয়ে এ কারণেই সেলিম ভাইদের পক্ষে কোনো শক্ত অবস্থান নেয়া সম্ভব নয়।

আওয়ামী লীগ প্রশ্নে কথা উঠলেই সেলিম ভাইকে অসহায়ভাবে আত্মসমর্পণ করতে দেখেছি। পরাজয়ের কারণ খুঁজে, তা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টার চেয়ে সেটা মেনে নেয়া, তথা সমঝোতার প্রবণতা ও ওই দুরবস্থার মধ্যে সন্তুষ্টি খোঁজাটাই তার মধ্যে প্রধান বলে মনে হয়েছে। তার ভাষায়, '৬৯-এর পরে নেতৃত্ব হারালেও আমি বলবো, '৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র ইউনিয়ন এবং ছাত্রলীগ সমান মাত্রায় কাজ করেছে। আন্দোলনের রূপরেখা, দিকনির্দেশনা বুয়েটের আহসান উল্লাহ হলের সেই ৩২১ নম্বর কক্ষ থেকে কমরেড ফরহাদ ভাই নির্ধারণ করে দিতেন। এই ধারাবাহিকতা মুক্তিযুদ্ধের সময়েও ছিল। মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র লড়াইয়ের প্রত্যক্ষ কাজে শারীরিক উপস্থিতি ছাত্রলীগের চেয়ে ছাত্র ইউনিয়নের বেশি ছিল। এ কারণেই মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭২ সালে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ যে কয়টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়েছে সব কয়টিতেই ছাত্র ইউনিয়ন বিজয়ী হয়।... ১৯৭৫ সাল পর্যন্তও ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্রলীগ সমানে-সমানে শক্তিশালী ছিল। অবশ্য জাসদপন্থি ছাত্রলীগ এদের শক্তিকে ছাপিয়ে যেতে শুরু করেছিল। বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর দেশের রাজনীতির প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হয়। ক্ষমতার লড়াইয়ে শক্তিশালী হয়ে ওঠে ছাত্রদল-ছাত্রলীগ।' বিপ্লবের কর্তৃত্ব হারানোর কষ্টের চেয়ে ছাত্র সংসদে জয়ী হওয়া, ছাত্রলীগের সঙ্গে সমানে-সমান হওয়া নিয়ে তার আত্মতুষ্টিটাই প্রধান।

সেলিম ভাই একাত্তরে ক্ষমতার পটপরিবর্তন সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেছেন, 
'ইয়াহিয়া খান ক্ষমতায় এলে তার জারীকৃত লিগাল ফ্রেমওয়ার্ক অর্ডার নামক 'অধ্যাদেশ নিয়ে পূর্ব পাকিস্তানে প্রশ্ন উত্থাপন করে কিছু উগ্রপন্থি সামরিক সরকারের অধীনে নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানিয়ে ভোটের বাক্সে লাথি মারার শ্লোগান দিতে থাকলো। মওলানা ভাসানী তাদের সঙ্গে কণ্ঠ মেলালেন।... এসব উগ্রপন্থিরা দাবি তুললো ভোটের আগে ভাত চাই। নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানিয়ে মওলানা ভাসানী জ্বালাও পোড়াও আন্দোলন শুরু করলেন।... দাবিগুলো ন্যায্য ছিল, তবে আন্দোলনে পদ্ধতিগত ভুল ছিল।... দেশব্যাপী আওয়ামী লীগের পক্ষে জোয়ার চলছিল।... ন্যাপ ভেঙ্গে গেলে আমরা অধ্যাপক মোজাফ্‌ফর আহমেদের মঞ্চে গিয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেই। মোজাফ্‌ফর ন্যাপ ভোট কম পেয়েছিল। জনগণ আওয়ামী লীগের পক্ষে একচেটিয়া ভোট দিয়েছিল। পূর্ব পাকিস্তানের আপামর জনগণের সম্মিলিত প্রয়াস ছিল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভোটে জয়লাভ করা। সে জয় আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কায় ভোট দিলেই অর্জিত হতে পারে। জনগণের হিসাব ছিল এরকম। নির্বাচনের ফলাফলে তারই প্রতিফলন ঘটল। আমরা নির্বাচনে রাজনৈতিক প্রচারণার ওপর জোর দিতে চেষ্টা করেছি। এর ফসল ভোটের বাক্সের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের খাতায়ই জমা হয়েছে। আমাদের চেষ্টা নিষ্ফল হয়নি। আমাদের প্রচারণার ফলে সৃষ্ট জনমতের কারণে নির্বাচনের পর রেসকোর্স ময়দানে যখন শপথ অনুষ্ঠান হয় তখন বঙ্গবন্ধুকে স্পষ্টভাবে ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র এবং ১১-দফা বাস্তবায়নের পক্ষে অবস্থান নিতে হয়। কারণ তিনি জানতেন, এই বিষয়গুলো এড়িয়ে জাতির নেতৃত্ব দেয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়।'

এই দীর্ঘ উদ্ধৃতিতে সেলিম ভাই ও তার পার্টির কোন চেহারাটা ধরা পড়ে? যুদ্ধ যখন সমাগত, তখন যারা ভোট বর্জন করার ডাক দিয়েছিলেন, তাদের তিনি বলছেন 'কিছু উগ্রপন্থী'। বলার ভঙ্গিটা খুবই বাজে, রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত। যাদের তিনি 'কিছু উগ্রপন্থি' বলেছেন, আপনি সম্বোধন থেকে নেমে এসে তুই-তুমারি করেছেন, তারা কেউ চোর-ডাকাত ছিলেন না। যুদ্ধের আমলে ভোটের লাইন ত্যাগ করার ডাকটা কেন সেলিম ভাইয়ের কাছে বিরক্তিকর? উত্তর একটাই, পার্টির লাইন। সেই যে মহাবিতর্কে ক্রুশ্চভের নেতৃত্বাধীন সোভিয়েত পার্টি ভোটের লাইনে গেল সেখান থেকেই তো নির্ধারিত হয়ে গেল সেলিম ভাইদের গন্তব্য। ফলে সত্তরের নির্বাচনে তারা কুঁড়েঘর মার্কায় গোপনে অংশ নিলেন। ফলাফল হিসেবে আদায় করলেন 'জাতির নেতৃত্ব দেয়া' প্রগতিশীল এক শেখ মুজিবকে। যার বোঝা এখনও তাদের কাঁধ থেকে নামেনি। মহাবিতর্কে তারা সক্রিয় অংশগ্রহণ করুন আর নাই করুন, বিষয়গুলো বুঝুন আর নাই বুঝুন, গাড্ডায় নেমেছেন তারা সেখান থেকেই। সেই ভুলের সার সংকলন না করলে সেলিম ভাই ও তার দলের আওয়ামী লীগের পিছনে হাঁটা ছাড়া আর ঘুরে দাঁড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।

সেলিম ভাইয়ের ৭ মার্চের স্মৃতিচারণটা কেমন, তার তুলনা দিতে এখানে বিশিষ্ট আওয়ামী বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচিত শাহরিয়ার কবিরের ৭ মার্চের স্মৃতিচারণের একটা তুলনা দেব। সেলিম ভাই বলেছেন, 'বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন। কিন্তু এমনভাবে তিনি স্বাধীনতার ডাক দেন যাতে করে তাকে আইনিভাবে আটকানো না যায়। অনেক ধরনের চাপের মধ্যে থেকে তাকে ৭ মার্চের বক্তৃতা দিতে হয়েছিল। ওইদিন রেসকোর্স ময়দানের ওপর দিয়ে বিমান উড়ে যাচ্ছিল, রেডিওতে সম্প্রচারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। যদিও রেডিও কর্মচারীদের আন্দোলনের কারণে পরে তারা তা সম্প্রচার করতে বাধ্য হয়েছিল। অনেকেই প্রশ্ন করেন, বঙ্গবন্ধু ওইদিন সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন না কেন। এ নিয়ে বিতর্ক আছে। তবে আমি মনে করি, স্বাধীনতাযুদ্ধের চূড়ান্ত প্রস্তুতি ছিল ৭ মার্চের ভাষণ। সে ভাষণে স্বাধীনতার 'ঘোষণা' না থাকলেও তাতে স্বাধীনতার 'ডাক' খুব স্পষ্টভাবে ছিল।'

আর তখন বেবী মওদুদের অধীনে সেলিম ভাইদের গ্রুপের সঙ্গেই যুক্ত থাকা শাহরিয়ার কবির বলেছেন, '৭ মার্চের ভাষণ শুনে আমরা কিন্তু একটু আশাহত হয়েছিলাম। আমরা যারা ছাত্র ইউনিয়ন করতাম, কাউকেই এটা সন্তুষ্ট করতে পারেনি। সবাই ভাবছিলাম যে, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা করে দিলেন না কেন! করে তো দিতেই পারতেন, বাকি সবই বললেন, শুধু ঘোষণাটা দিলেন না! পরে বুঝেছি ওটা স্বাধীনতা ঘোষণার সঠিক সময় ছিল না। তাহলে তখন তাকে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে পাকিস্তানি সরকার টার্গেট করতে পারত। আমাদের তো তখন রক্ত টগবগ করছে এবং বেশ মন খারাপ! যদিও দেখতে পাচ্ছিলাম সামরিক বাহিনীর হেলিকপ্টার টহল দিচ্ছে মাথার ওপর।'

পক্ষপাতিত্বটা এখানে খুব স্পষ্ট। শাহরিয়ার কবিরের মতো আজকের আওয়ামী লীগারও সে সময়ের বোধটাকে বাতিল করে দেননি। স্বাধীনতার ঘোষণা না আসার দুঃখটা তার বক্তব্যে এসেছে। যদিও তিনিও মুজিবের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। কিন্তু সেলিম ভাইয়ের বক্তব্যে মুজিবের পক্ষে সাফাই ছাড়া আর কিছু নেই। দিনশেষে কমিউনিস্ট নেতা হয়েও বুর্জোয়াপ্রীতির প্রশ্নে সেলিম ভাই এগিয়ে রইলেন। বাংলাদেশে বিপ্লবী সংগ্রাম বিকশিত হয় না কেন? তার সমাধানের সঙ্গে এসব প্রশ্ন অনেকখানি জড়িত।

। পাঁচ ।
মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে অনেক কথাই বলেছেন সেলিম ভাই। তবে ভারত, 'র, মুজিব বাহিনী' সোভিয়েত, সাম্রাজ্যবাদ- এই প্রসঙ্গগুলো এবং মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক দিক সেখানে এসেছে খুব হাল্কাভাবে। উল্লেখ করার মতো এটুকুই বলেছেন, 'সেক্টর কমান্ডারের অধীনে যে বাহিনী (এফএফ) সেখানে প্রথম দিকে ছাত্র ইউনিয়নের সদস্যদের নেয়া হতো না। স্থানীয় এমপি বা এমএলএ-এর সুপারিশ ছাড়া কেউ এফএফ বাহিনীতে ঢুকতে পারত না। শুধু আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগ সুযোগ পেত। তবে খালেদ মোশাররফ গোপনে আমাদের কাউকে কাউকে সুযোগ দিয়েছিলেন। এ জন্য প্রশিক্ষণ নেয়া খুবই কঠিন ছিল।... মুজিব নগর সরকার পরিচালনা করছিলেন তাজউদ্দীন আহমেদ। আওয়ামী লীগের মধ্যে তখন তাজউদ্দীন-বিরোধী অংশটি সক্রিয়। তারা তাজউদ্দীনকে উচ্চাভিলাষী আখ্যা দিয়ে নিজেদের আসল আওয়ামী লীগ দাবি করলো এবং প্রশিক্ষণ দেয়া নেয়ার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের কঠোর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার জন্য প্রাণান্ত চেষ্টা চালাতে থাকল। অপরদিকে ভারত সরকার দেখলো একটি প্রশিক্ষিত গেরিলা বাহিনীর মাধ্যমে পরিচালিত যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে ফলাফল বামপন্থিদের পক্ষে চলে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। অবস্থা ভিয়েতনামের মতো হয়ে যেতে পারে। সঙ্গত কারণে ভারতের বুর্জোয়া সরকার তা চাইতে পারে না। এসব দিক বিবেচনা করে ভারত সরকার বেঙ্গল লিবারেশন ফোর্স (বিএলএফ) যা মুজিব বাহিনী নামে পরিচিত তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিতে থাকলো। এ সময় ভারতের সঙ্গে রাশিয়ার কিছু কিছু বিষয়ে চুক্তি হয়। এর পরই ভারত সরকার সম্মত হয় ছাত্র ইউনিয়ন, কমিউনিস্ট পার্টি, ন্যাপের সদস্যদের নিয়ে অতিগোপনে একটি গেরিলা বাহিনী গঠন করে প্রশিক্ষণ শুরু করতে। প্রথম যে ব্যাচকে প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য নেয়া হয় সেখানেই আমি ছিলাম।'

ভারতের ভূমিকা নিয়ে কী বললেন এই মার্কসবাদী নেতা? নামকাওয়াস্তে মুজিব বাহিনীর কথা বললেন, র'-এর প্রসঙ্গ তো আসেইনি। উল্টো এখানেও তার মধ্যে দেখা গেল শেষমেশ কিছু একটা পাওয়ার তুষ্টি। আর তা হলো, প্রথম ব্যাচে তিনি ছিলেন! মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সেলিম ভাইয়ের স্মৃতিচারণ, মস্কোপন্থীদের রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বের এক ন্যাক্কারজনক দৃষ্টান্ত। এত বড় একটা ঘটনা নিয়ে তিনি কথা বলছেন, অথচ সেখানে রাজনীতি– তিনি যে শ্রেণীর সপক্ষে লড়াইয়ের কথা বলেন, তাদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কোনো আলাপ নেই। আন্তর্জাতিক রাজনীতির কোনো বিশ্লেষণ নেই। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অধিকাংশ বামপন্থীদের আলাপচারিতা শুনলে মনে হবে যেন, ওই এক বছরের জন্য পৃথিবী থেকে সাম্রাজ্যবাদ উধাও হয়ে গেছে। সাম্রাজ্যবাদ ওই এক বছরের জন্য খেলনা হয়ে গিয়েছিল। তখন তাদের কোনো ষড়যন্ত্র করার মতো ক্ষমতা ছিল না। বঙ্গোপসাগরের চরে আটকে গিয়েছিল মার্কিন সপ্তম নৌবহর। সেলিম ভাইয়ের আলাপও ঘুরেছে সেই একই বৃত্তে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কমিউনিস্ট সংগঠন ও দলগুলোরও সামগ্রিক কোনো সার সংকলন চোখে পড়ে না। এর কারণ কি? সহজ উত্তর হচ্ছে, জাতীয়তাবাদ। যুদ্ধে গৌরবের পাশাপাশি যে অগৌরবের দিক আছে, জাতীয়তাবাদ ও এস্টাবলিশমেন্টের জন্য সেই সত্যগুলো নিয়ে তারা কথা বলেন না। নিজ দেশ, নিজ জাতি বিষয়ক, নিজ দল বিষয়ক অগৌরবের কথা বলাটা এস্টাবলিশমেন্টের ধ্বজাধারীদের পক্ষে একেবারেই অসম্ভব। কার্যত বিপ্লবী মার্কসবাদীরা ব্যতিত এমন দুঃসাহস শোধনবাদীরা দেখাতে সক্ষম নয়। কারণ জাতীয়তা ও দেশের সীমানা যে ঐতিহাসিকভাবে ক্ষণস্থায়ী এই সত্য তাদের নজর থেকে সরে যায়।

যুদ্ধ পরবর্তী পরিস্থিতি সম্পর্কে আলাপ করতে গিয়ে সেলিম ভাই তাৎপর্যপূর্ণ কিছু কথা বলেছেন। একটু ভালো করে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, যেন কথা বলছেন আওয়ামী লীগের কোনো বিদ্রোহী নেতা। সেখানে প্রলেতারীয় শ্রেণীর কোনো কর্মসূচীর কথা নেই, কমিউনিস্ট আদর্শের কথা নেই, মজুরের কথা নেই, আছে কেবল আওয়ামী লীগের সংস্কার আর সাম্প্রদায়িকতা! যুদ্ধ পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে সেলিম ভাইয়ের বক্তব্য হচ্ছে, 'আওয়ামী লীগ '৭২-এর সংবিধান রচনা করেছিল ঠিকই কিন্তু তারা এই সংবিধানের মর্মকথা গ্রহণ করেনি। সংবিধানকে কিতাব হিসেবে রেখে তারা অনেক ক্ষেত্রে উল্টো কাজ করেছে। মুক্তিযুদ্ধের পর একটি সাংস্কৃতিক বিপ্লব হওয়া খুব জরুরি ছিল। কিন্তু সরকার সে দিকে নজর দেয়নি। আওয়ামী লীগ সরকার সাম্রাজ্যবাদী শক্তির কাছে মাথা নত করতে শুরু করেছিল। তাজউদ্দীন আহমেদকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছিল। তারা সাম্প্রদায়িকতার প্রশ্নে জনগণকে সচেতন ও শিক্ষিত করার কর্তব্যটিকে কার্যত এড়িয়ে চলেছে। বঙ্গবন্ধুর ভাষায় তারা কম্বল চুরির কাজে নিয়োজিত হয়। বঙ্গবন্ধুর ভাষায় তিনি পেয়েছিলেন চোরের খনি। বঙ্গবন্ধুর নিজের কম্বলটিও নাকি চুরি হয়েছিল। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় গিয়ে তারা লুটপাটে মত্ত হয়ে ওঠে। এরপরে এসেছে সামরিক শাসন। জিয়ার, এরশাদের। বিএনপি বড় দল হয়ে উঠেছে। তাদের অপরাধ আরও বেশি। তারাই অবাধ লুটপাট চালানোর পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ধারাকে এদেশে শক্তিশালী করেছে। এ কারণেই স্বাধীনতার স্বাদ আজও বাঙালি পায়নি।' 
এ হচ্ছে যেনতেনভাবে, ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বুর্জোয়া ব্যবস্থাকেই বৈধতা দেয়া, এর বাইরে যাওয়ার কোনো পথ নেই– এটাই প্রতিষ্ঠা করা। এখানে সিপিবির কথিত 'সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব' কোথায়? এখানে তো দেখা যাচ্ছে, সেলিম ভাই শেখ মুজিবকে পূজা দিচ্ছেন। নিজের লোকদের শেখ মুজিব গালি দিয়েছেন– এটা উল্লেখ করে তার মহাত্ম্য প্রচার করেছেন।

সেলিম ভাই বলেছেন, 'আমাদের প্রধান ভুল ছিল, আমরা মনে করতাম বঙ্গবন্ধুর সরকারকে সংহত হওয়ার সুযোগ দিতে হবে। তাকে ডিস্টার্ব করা ঠিক হবে না। কিন্তু আমাদের উচিত ছিল বঙ্গবন্ধুর সরকারের ইতিবাচক কর্মকাণ্ডের সমর্থনের পাশাপাশি নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা। আমরা তা পারিনি। একারণে আওয়ামী লীগ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া মানুষ শক্তিশালী কোনো বিকল্প পায়নি। আওয়ামী লীগের মোহ থেকে মুক্ত হওয়া মানুষকে আমাদের দিকে আমাদের কাতারে টানতে পারিনি। এটি আমাদের রাজনৈতিক বড় ধরনের ভুল ছিল। আমরা সেসময় বিরোধী দল হয়ে ওঠার জন্য উপযুক্ত কৌশল নিতে পারিনি। পরে আত্মসমালোচনা করতে হয়েছে।' সেলিম ভাই আত্মসমালোচনার কথা বলে সেই পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার দাবী করেছেন। কিন্তু তার এই সাক্ষাৎকার ও অদ্যাবধি গৃহীত তাদের দলীয় কর্মসূচী প্রমাণ করে যে, আসলে তারা আওয়ামী বৃত্ত থেকে বের হতে পারেননি। এভাবে সম্মেলন করে ঘোষণা দিয়ে কি আগের লাইন থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব?

। ছয় ।
সিপিবি নেতারা বারবার আত্মসমালোচনা করেছেন। নতুন লাইন গ্রহণ করেছেন। কিন্তু বিএনপি-আওয়ামী লীগ যখন সঙ্কট সমাধান করতে পারছে না, তখন তারাই ছুটে যান মীমাংসা করতে। মার্কসবাদী পার্টিতে বুর্জোয়াদের সংলাপে সহযোগিতার লাইন কোথা থেকে আসে? আত্মসমালোচনা বা কাউন্সিল করে লাইন পরিবর্তন করা গেলে সিপিবি হয়তো আগের লাইন থেকে বেরিয়ে আসতে পারতো, কারণ সেটা তারা অনেকবারই করেছে। কিন্তু এভাবে যে লাইন পরিবর্তন কখনই সম্ভব নয়, তা প্রমাণীত সত্য।

পার্টিকে তার আগের ভুল লাইন থেকে বেরিয়ে আসতে হলে আগের লাইন ও নতুন লাইনের মধ্যে পার্থক্য টানতে হবে। সিপিবিকে শুরু করতে হবে ১৯৪৭ সাল থেকে। ব্রিটিশের দেশভাগের ষড়যন্ত্র কেন তারা মেনে নিয়েছিল? সিপিআই-এর সম্মেলনে কেন গান্ধী-জিন্নাহ'র ছবি টাঙানো হয়েছিল? মহাবিতর্কে তাদের অবস্থান কী ছিল? ১৯৭১ ও তার পরবর্তীকালে তাদের ভূমিকা কি ছিল? আজকের যুগ পর্যন্ত মার্কসবাদী মতাদর্শের যে বিকাশ ঘটেছে, তাকে কেন তারা বিশ্লেষণ করার মতো সময় দিতে পারেনি? প্রতিটা ভুলকে চিহ্নিত করতে হবে, তার সঙ্গে চূড়ান্ত বিচ্ছেদ টানতে হবে। ভুলের দায় স্বীকার করতে হবে। আত্মসমালোচনা করতে হবে। শুদ্ধি অভিযান চালাতে হবে পার্টিব্যাপী। সুবিধাবাদী চক্রকে ঝেড়ে ফেলতে হবে। এর বাইরে বুলি কপচে লাইনে কোনো পরিবর্তন আনা যাবে না। মুখে যাই বলা হোক, কাগজে যাই লেখা থাক, শেষ পর্যন্ত দেখা যাবে আওয়ামী লীগের বি-টিম হিসেবেই দল চলছে।

শুধু সেলিম ভাই নন, অনেক সিপিবি নেতা-কর্মীকেই তার মতো হুবহু এ কথাগুলো বলতে শুনেছি– 'বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগের কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। আমরাই বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে ঢাকার রাজপথে প্রথম বিক্ষোভ মিছিল করেছিলাম। আমি সবাইকে ঘরে ঘরে গিয়ে সংগঠিত করেছি। ৪ নভেম্বর আমরা ৩২ নম্বরে মিছিল নিয়ে গিয়ে ফুল দিয়েছি।' আর সব নেতাকর্মীরা এটুকু বলেই থেমে যান। প্রমাণ করে ফেলেন যে, তারাই সবচেয়ে বড় বঙ্গবন্ধুপ্রেমী। কিন্তু সেলিম ভাই এখানে থামেননি, তিনি অর্থনীতিতে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম, তাই আরেকটু যোগ করলেন– 'প্রসঙ্গটি এ কারণে বললাম যে, বঙ্গবন্ধু যখন আমার কর্মীকে হত্যা করলেন তখনও প্রতিবাদ করেছিলাম। আবার বঙ্গবন্ধুকে যখন অন্যায়ভাবে হত্যা করা হলো তখনও আমরাই প্রথম প্রতিবাদ করেছিলাম। অন্যায় উপলব্ধি করতে পারা ও তার প্রতিবাদ করতে পারাটাই হচ্ছে বড় কথা।'

ঠিক এখানটাতেই আমাদের একটা প্রশ্ন ছিল সেলিম ভাইয়ের কাছে। একজন কমিউনিস্ট হিসেবে তিনি কি কমরেড সিরাজ সিকদার, কমরেড মনিরুজ্জামান তারা, কমরেড মোফাখ্‌খার চৌধুরী, কমরেড কামরুল মাস্টার, কমরেড ডাক্তার টুটু হত্যার প্রতিবাদে মিছিল করেছিলেন? এদের লাইন ভুল হতে পারে, আপনার সমালোচনা থাকতে পারে, কিন্তু এরাও তো অন্যায়ের শিকার! নয় কি? বিচার বহির্ভূতভাবে তাদের হত্যা করা হয়। এদের মধ্যে কার মৃত্যুর খবর শোনার পর, তার দলের কর্মীদের না পেয়েও আপনি মিছিল বের করেছিলেন? শেখ মুজিব তো আপনার কমিউনিস্ট আন্দোলনের কেউ নন। এরা তো সবাই কমিউনিস্ট আন্দোলনের অংশ। আমরা জানি, আপনি বিচার বহির্ভূত হত্যার বিরুদ্ধে একবারই 'সবাইকে ঘরে ঘরে গিয়ে সংগঠিত' করেছেন। সেটা কেবল শেখ মুজিবের ক্ষেত্রেই! আপনার শ্রেণী অবস্থান ও বুর্জোয়াদের পূজা-অর্চনা দেয়ার চিত্রটা কি দেখতে পাচ্ছেন?

আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যে সেলিম ভাই কিছুই বলেননি, তা নয়। বলেছেন বৈকি– 'আমার মনে আছে, বঙ্গবন্ধু একবার বক্তৃতায় বললেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অনেক বছর জেল খেটেছেন। এবার তাদের কিছুটা আরাম আয়েশে থাকার সুযোগ দেয়া উচিত। বঙ্গবন্ধুর এমন নীতির কারণে আওয়ামী লীগের নেতাদের রাতারাতি পরিবর্তন আসতে থাকে। দেখেছি, আওয়ামী লীগ নেতারা এক হাতে লাইসেন্স নিতেন আরেক হাতে টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দিতেন। এই নীতি আমেরিকার নীতি একই। এরপরেও বলতে হয়, বঙ্গবন্ধু সতর্ক ছিলেন। খন্দকার মুশতাক সম্পর্কে আমাদের বলতেন, মুশতাক থেকে সতর্ক থেকো। আমি ওকে চিনি। ওর মাথাভর্তি শুধু প্যাঁচ আর প্যাঁচ। ওর মাথায় যদি একটি তারকাঁটা ঢুকিয়ে দেয়া যায়, তাহলে স্ক্রু হয়ে বের হবে। কিন্তু খন্দকার মুশতাককেই আবার বঙ্গবন্ধু হাতের কাছে রেখেছিলেন। মুশতাক কুমিল্লার একটি আসন থেকে নির্বাচনে হেরে যায়। হেলিকপ্টারে করে ব্যালট বক্স ঢাকায় এনে জালিয়াতির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু খন্দকার মুশতাককে জিতিয়েছিলেন। মনে রাখবেন, ইতিহাস বড়ই নির্মম। ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না।' বুর্জোয়া দল আওয়ামী লীগের এই সমালোচনাটুকু করেছেন কমিউনিস্ট দলের নেতা। এখানেও তার শেখ মুজিবকে রক্ষা করার ধারাবাহিকতায় কোনো ছেদ পড়েনি। ইতিহাস আসলেই কাউকে ক্ষমা করে না!

। সাত ।
সেলিম ভাই চিরকালই শহরাঞ্চলে ছিলেন। সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড করেছেন, ছাত্র ইউনিয়ন করেছেন, মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। ১৯৮০ সালের দিকে পার্টি তাকে দায়িত্ব দিল ক্ষেতমজুর সমিতি করার। আজকের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি বলছেন, 'অনেক প্রতিকূল পরিবেশের মধ্য দিয়ে কাজ করতে হয়েছে। খাস জমি নিয়ে মানিকগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, ঠাকুরগাঁ, নোয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গ্রামের জোতদারদের সঙ্গে ক্ষেতমজুর সমিতির রক্তাক্ত সংঘর্ষ হয়েছে। ক্ষেতমজুর সমিতির অনেক সদস্য নিহত হয়েছে। সারাদেশেই তখন ক্ষেতমজুর সমিতির আন্দোলন জোরদার হয়ে উঠেছে।' মহান এই সংগ্রামের আনুষ্ঠানিক যাত্রার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সেলিম ভাই উত্তর দেন– '১৯৮১ সালের ১৭ মার্চ ঢাকায় ক্ষেতমজুরদের সম্মেলন আহ্বান করা হয়। আমি আওয়ামী লীগের মহিউদ্দিন সাহেব, সাজেদা চৌধুরী, ওয়ার্কার্স পার্টির মেনন সাহেবসহ অনেকের কাছেই যাই। তাদের কাছে জনবল চাই। তারা সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বটে, কিন্তু সংগঠনে যোগ দিতে রাজি হননি। একমাত্র ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির একজন নেতা কমিটিতে থাকতে সম্মত হন। সম্মেলনে আমাকে ক্ষেতমজুর সমিতির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা হয়। ওই সময় কোনো সভাপতি ছিল না। দায়িত্ব পেয়ে গ্রামেগঞ্জে চারণের বেশে ক্ষেতমজুরদের মাঝে ঘুরে বেড়ানো বাড়িয়ে দেই। খাস জমির জন্য ও প্রজেক্টের গম চুরির বিরুদ্ধে সর্বত্র উত্তাল সংগ্রাম গড়ে ওঠে।' ফলাফল কী সেলিম ভাই? সাজেদা আপাদের ডেকে ক্ষেতমজুর সমিতি করতে গেলেন। তাদের দখলে কি খাসজমি ছিল না?

এসব প্রশ্ন করলে সিপিবির ও সেলিম ভাইয়ের পরিচিত-ঘনিষ্ঠ উদারতাবাদীরা আমাদের বেশ গালি দিবেন। কিন্তু সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের পথ ও পদ্ধতি কাকে বলে, এই প্রশ্ন তো সেলিম ভাইয়ের কাছে রাখাই যায়! দেখুন, সেলিম ভাইয়ের উত্তরটা কি– ক্ষেতমজুর আন্দোলনে 'দুটো দাবি স্পষ্টতই মেনে নেয় সরকার। একটি ছিল ক্ষেতমজুরের মজুরি কমপক্ষে সাড়ে তিন সের চালের মূল্য হতে হবে। আরেকটি ছিল, খাস খতিয়ানের জমি একমাত্র ভূমিহীন দম্পতিকে এক টাকার বিনিময়ে বিতরণ করতে হবে। এই দুটি আইন ছিল আমাদের আন্দোলনের বিশাল এক নৈতিক বিজয়।... সরকার বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব কোনো আইন বাস্তবায়ন করা হয়নি।' সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব যে পার্টির কর্মসূচী, সাময়িক মজুরির দাবি পূরণ হওয়া যদি তার কাছে হয় 'বিশাল নৈতিক বিজয়' তাহলে ওই পার্টির নীতি দাঁড়ায় কোনটি- রাষ্ট্র ভাঙা নাকি ট্রেড ইউনিয়ন করা?

রাষ্ট্র ভাঙা যে আদৌ তাদের কাজ নয়, এটা সিপিবি ও সেলিম ভাইরা প্রমাণ করেছেন বহুভাবে। তবে বুর্জোয়াদের স্বীকৃতি আদায়টা যে এত বড় শ্রেণীসংগ্রামের বিষয়, এটা আগে কেউ মূর্ত করেনি। সেলিম ভাই বলেন, '১৯৮৮ সালের দিকে তিন জোটের আন্দোলন চলছে। একই সমাবেশে শেখ হাসিনা আমি অবস্থান করছি। মঞ্চের সামনে অধিকাংশ উপস্থিতিই ক্ষেতমজুর। শেখ হাসিনা একটু অবাক হয়ে বললেন, সেলিম ভাই, সমাবেশে তো আপনার লোকই বেশি; তবে ভোট নৌকা মার্কাতেই দেবে। এখনও হয়ত ভোট তারা নৌকা বা ধানের শীষ মার্কাকেই দিচ্ছে। কিন্তু বড় দলগুলো আমাদের আন্দোলনকে স্বীকৃতি দিতে শুরু করেছে, এটিও আমাদের অর্জন।' –এই হলো সেলিম ভাইদের শ্রেণীসংগ্রাম।

। আট ।
সেলিম ভাই আরও অনেক কথা বলেছেন। ধর্ম প্রশ্নে একটি প্রশ্ন মোকাবেলা করতে গিয়ে মনে হলো সবচেয়ে বেশি বাজে অবস্থান নিতে হয়েছে তাকে। ঈশ্বর বিশ্বাসের প্রশ্নে বলেন, 'ইসলাম ধর্মে বলা আছে, ঈশ্বরে বিশ্বাস আছে কীনা এমন প্রশ্ন শুধু আল্লাহ তাআলাই করার অধিকার রাখেন। তার কাছে আমি এ প্রশ্নের জবাব দিব। মানব সেবার মধ্য দিয়েই ঈশ্বরের সাধনা হয়। এরপরেও আপনার প্রশ্নের জবাবে স্পষ্ট করে বলছি, যারা কমিউনিজমে বিশ্বাস করে এবং যারা নাস্তিক তাদের মতবাদ হলো পরস্পরবিরোধী।' মতাদর্শিক প্রশ্নটাকে এখানেও জলাঞ্জলি দিলেন তিনি। বস্তুবাদের স্বপক্ষে কোনো অবস্থান নিলেন না। কৌশলকে বসিয়ে দিলেন আসলের স্থলে। নাস্তিক ট্যাগ খাওয়ার ইচ্ছা না থাকলে সহজেই এড়িয়ে যেতে পারতেন প্রশ্নটি। তা না করে বলেছেন, 'ধর্মে শান্তি, মানবতা, সাম্য ইত্যাদির যেসব কথা আছে কমিউনিস্টরা তা প্রতিষ্ঠার জন্যই সংগ্রাম করে যাচ্ছে। কমিউনিস্টরা নাস্তিক, এ কথা শত্রুর একটি মিথ্যা প্রচারণা মাত্র।'

সবশেষে বর্ণনা দিয়েছেন এই বয়সের স্বপ্নগুলোর– 'সভ্যতা অগ্রসর হচ্ছে কমিউনিজমের দিকে। দানবের চেয়ে মানবের প্রাধান্য যদি আমরা স্বীকার করি, তাহলে এ কথা মানতেই হবে যে মানবের বিকাশ এবং সৃজন কমিউনিস্ট সভ্যতার মধ্য দিয়েই পূর্ণতা পাবে। এই স্বপ্নই দেখছি, দেখবো। জয় হোক মানবতার, জয় হোক সমাজতন্ত্রের।' এই শেষ পর্যায়ে এসেও সেলিম ভাই তার শ্রেণী অবস্থানটাকেই মূর্ত করলেন। আর সব মধ্যবিত্ত, পেটি বুর্জোয়ার মতো সমাজতন্ত্র তার কাছেও শ্রেণীবিচ্ছিন্ন মানবতার অংশ। ঠিক যেমন স্কাউটিং!

শেষকথা
সেলিম ভাইয়ের স্বপ্নের কমিউনিজমের অগ্রসরতার রাস্তায় শ্রমিকের কোনো কথা থাকে না, নিপীড়িত-মেহনতিদের কথা থাকে না, আন্তর্জাতিক শ্রমিকশ্রেণীর ঐক্যের কথা থাকে না। কথা থাকে কেবলই মানবতাশ্রয়ী সমাজতন্ত্রের। যার ভিত্তি তিনি সারা জীবন ব্যয় করে প্রস্তুত করেছেন। আর তা হচ্ছে সুবিধাবাদ। প্রথমেই উদ্ধৃত লেনিনের উদ্ধৃতিটি মিলিয়ে দেখুন মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের জীবনীর সঙ্গে– শ্রেণী সমঝোতার ওকালতি, সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের ধারণা এবং সংগ্রামের বিপ্লবী পদ্ধতি ত্যাগ, বুর্জোয়া জাতীয়তাবাদের সঙ্গে খাপ খাওয়ানো, জাতীয়তা ও দেশের সীমানাগুলো যে ঐতিহাসিকভাবে ক্ষণস্থায়ী এই সত্য নজর থেকে সরে যাওয়া, বুর্জোয়া বৈধতাকে পূজনীয় করে তোলা, 'জনগণের ব্যাপক অংশ' (মানে পেটিবুর্জোয়া)-এর বিরূপ হয়ে ওঠার ভয়ে শ্রেণী দৃষ্টিভঙ্গি ও শ্রেণী সংগ্রামকে বর্জন করা– কোন উপাদানটি নেই? তার সমাজতন্ত্রের ভিত্তি এগুলোই। আগামী দিনের বিপ্লবী সৈনিকদের এসব সংশোধনবাদী প্রবণতা চিনে রাখতে হবে ও এগুলোর সঙ্গে বিচ্ছেদ টানতে হবে।

তথ্যসূত্র : 
১। লেনিন। রচনা সংকলন। খন্ড ২১। পৃষ্ঠা ৩৫-৪১। ইংরেজী সংস্করণ। প্রগতি প্রকাশন, ১৯৭৪।
২। সাপ্তাহিক। ঈদুল ফিতর সংখ্যা, ২০১৪।
৩। উইকিপিডিয়া। http://bn.wikipedia.org/wiki/স্কাউটিং
৪। পাঞ্জাবি পাঁচালি। ক্যানভাস। পোশাক গবেষক চন্দ্রশেখর সাহার প্রদত্ত তথাবলী থেকে। http://mycanvasworld.com/archives/12641
৫। উইকিপিডিয়া। http://bn.wikipedia.org/wiki/পায়জামা
৬। দৈনিক আমাদের সময়। ঢাকা, রোবাবার, ৮ জুন ২০১৪।
৭। সিপিএসইউ। ১৪ জুলাই, ১৯৬৩-র মহাবিতর্কের দলিল। আন্তর্জাতিক মতাদর্শগত মহাবিতর্ক। প্রথম খন্ড। পিপলস বুক সোসাইটি। কলকাতা ১৯৯৫। পৃষ্ঠা ৮৭।
৮। ঐ, পৃষ্ঠা ৮৮।
৯। সিপিসি। ১৪ জুন, ১৯৬৩-র মহাবিতর্কের দলিল। আন্তর্জাতিক মতাদর্শগত মহাবিতর্ক। প্রথম খন্ড। পিপলস বুক সোসাইটি। কলকাতা ১৯৯৫। পৃষ্ঠা ৩৭-৩৮।
১০। ভি. আই. লেনিন। রাষ্ট্র ও বিপ্লব। নির্বাচিত রচনাবলী। খন্ড ২, অংশ ১। পৃষ্ঠা ২৮৯।
১১। কার্ল মার্কস। গোঁথা কর্মসূচীর সমালোচনা। কার্ল মার্কস-ফ্রেডরিখ এঙ্গেলস নির্বাচিত রচনাবলী। মস্কো ১৯৫৫। ইংরেজী সংস্করণ, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৩২-৩৩।
১২। সিপিসি। ৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৬৩-র মহাবিতর্কের দলিল। পিপলস ডেইলি ও রেড ফ্ল্যাগ পত্রিকার সম্পাদকীয় নিবন্ধ। আন্তর্জাতিক মতাদর্শগত মহাবিতর্ক। প্রথম খন্ড। পিপলস বুক সোসাইটি। কলকাতা ১৯৯৫। পৃষ্ঠা ১১৪।
১৩। সিপিএসইউ। ১৪ জুলাই, ১৯৬৩-র মহাবিতর্কের দলিল। আন্তর্জাতিক মতাদর্শগত মহাবিতর্ক। প্রথম খন্ড। পিপলস বুক সোসাইটি। কলকাতা ১৯৯৫। পৃষ্ঠা ৮৩।
১৪। ঐ, পৃষ্ঠা ৮৪।
১৫। সিপিসি। ৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৬৩-র মহাবিতর্কের দলিল। পিপলস ডেইলি ও রেড ফ্ল্যাগ পত্রিকার সম্পাদকীয় নিবন্ধ। আন্তর্জাতিক মতাদর্শগত মহাবিতর্ক। প্রথম খন্ড। পিপলস বুক সোসাইটি। কলকাতা ১৯৯৫। পৃষ্ঠা ১১৩।
১৬। ঐ, পৃষ্ঠা ১১৪।
১৭। ঐ, পৃষ্ঠা ১১৬।
১৮। সিপিসি। ১০ নভেম্বর, ১৯৫৭। সোভিয়েত পার্টির ২০তম কংগ্রেসের রিপোর্টের প্রেক্ষিতে সিপিসির পাঠানো সংশোধনী। আন্তর্জাতিক মতাদর্শগত মহাবিতর্ক। প্রথম খন্ড। পিপলস বুক সোসাইটি। কলকাতা ১৯৯৫। পৃষ্ঠা ১৫০।
১৯। ভি. আই. লেনিন। সর্বহারা বিপ্লবের কর্মসূচী। নির্বাচীত রচনাবলী। ইংরেজী সংস্করণ। মস্কো, ১৯৫২। খন্ড ১, অংশ ২। পৃষ্ঠা ৫৭৪।
২০। সিপিসি। ৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৬৩-র মহাবিতর্কের দলিল। পিপলস ডেইলি ও রেড ফ্ল্যাগ পত্রিকার সম্পাদকীয় নিবন্ধ। আন্তর্জাতিক মতাদর্শগত মহাবিতর্ক। প্রথম খন্ড। পিপলস বুক সোসাইটি। কলকাতা ১৯৯৫। পৃষ্ঠা ১১২।
২১। সিপিসি। ১৪ জুন, ১৯৬৩-র মহাবিতর্কের দলিল। আন্তর্জাতিক মতাদর্শগত মহাবিতর্ক। প্রথম খন্ড। পিপলস বুক সোসাইটি। কলকাতা ১৯৯৫। পৃষ্ঠা ২৬-২৭।
২২। সিপিএসইউ। ১৪ জুলাই, ১৯৬৩-র মহাবিতর্কের দলিল। আন্তর্জাতিক মতাদর্শগত মহাবিতর্ক। প্রথম খন্ড। পিপলস বুক সোসাইটি। কলকাতা ১৯৯৫। পৃষ্ঠা ৬৫।

http://www.istishon.com/node/12374

Modi visits Dhakeshwari temple, Ramakrishna Mission in Dhaka

India Today - ‎2 hours ago‎
Prime Minister Narendra Modi on Sunday morning offered prayers at Dhakeshwari Temple in Bangladesh's capitalDhaka. He is also scheduled to visit Ramakrishna Mission besides visiting the new chancery building of the Indian embassy. On Saturday ...

Narendra Modi Visits Dhakeshwari Temple; To Meet Business Leaders in Dhaka ...

The Hans India - ‎18 minutes ago‎
Earlier on Saturday, India and Bangladesh opened a new chapter in their ties as they settled the 41-year-old boundary dispute and promised to do more in other areas amid Modi's announcement of a fresh line of credit of $2 billion to the neighbouring country.

PM Modi begins 'historic' Dhaka visit, thanks Sheikh Hasina for warm welcome

Hindustan Times - ‎22 hours ago‎
Prime Minister Narendra Modi was given a warm welcome by his Bangladeshi counterpart Sheikh Hasina on Saturday as he arrived in Dhaka for an official visit that will focus on closer security and economic ties and agreements to boost connectivity and ...

PM Modi to receive award on behalf of Vajpayee in Dhaka

Zee News - ‎3 hours ago‎
Sunday being the final day of his two-day official visit to Bangladesh, Prime Minister Modi will also visitDhakeshwari Temple and the Ramakrishna Mission. On Saturday, India and Bangladesh signed 19 agreements and MoUs on several issues apart from the ...

PM Modi in Dhaka: India, Bangladesh seal boundary agreement, pledge zero ...

Hindustan Times - ‎14 hours ago‎
Prime Minister Narendra Modi gestures as Bangladesh's Prime Minister Sheikh Hasina and West Bengal chief minister Mamata Banerjee look on during the Indian PM's visit to Bangladesh. (AP Photo) ...

Modi begins Dhaka visit with homage to martyrs

The Hindu - ‎9 hours ago‎
Just before leaving New Delhi, he said: "This visit is going to strengthen the bond between our nations, benefiting people of our countries & our region." On Sunday morning, Mr. Modi will offer prayers at the Dhakeshwari Temple and the Ramakrishna Mission.

PM Modi's Bangladesh visit: India may agree to request for barrage on Ganga

Economic Times - ‎Jun 5, 2015‎
NEW DELHI: India may concede, during Prime Minister Narendra Modi's upcoming visit to Dhaka, Bangladesh's long-standing request to build a barrage on the river Ganges that flows into the neighbouring country and also offer to make investments in the ...

Modi to begin second day of his whirlwind tour in Dhaka with prayer

Bangladesh News 24 hours - ‎10 hours ago‎
According to Modi's itinerary, he will go to Ramakrishna Mission from the temple, and later visit India's New Chancery Complex at Baridhara. Dhaka Ramakrishna Mission is a branch of Belur Math, which Modi visited last month when he was in Kolkata.

'100 veg dishes for Modi': How Bangladesh media is covering PM's visit

Hindustan Times - ‎22 hours ago‎
"When Indian Prime Minister Narendra Modi flies into Dhaka this morning, he will find a people ready and willing to offer him and his country the best in terms of friendship," said a comment piece on the front page of the English newspaper The Daily Observer.

PM Modi in Bangladesh: Complete Schedule of PM's 2-Day Trip; Where to ...

International Business Times, India Edition - ‎Jun 5, 2015‎
On Sunday, Modi will visit the Dhakeshwari National temple, the Ramakrishna Mission, and the new chancery complex in Dhaka. He will meet the President of Bangladesh Abdul Hamid over lunch. Modi will interact with Bangladeshis at the Bangabandhu ...

High expectations, focus on ties as Modi readies for Dhaka visit

Hindustan Times - ‎Jun 4, 2015‎
The good news would include fresh financial assistance, connectivity plans, new border markets, investments, stepping up security and defence cooperation and a political message that excellent ties with Dhaka is an important aspect of the Modi's foreign ...

PM Narendra Modi's Bangladesh Visit to Strengthen Trade Ties

NDTV - ‎Jun 5, 2015‎
The issue of Bangladesh, Bhutan, India and Nepal (BBIN) Motor Vehicle Agreement is also likely to figure in the talks PM Modi will have with Ms Hasina. India feels improving connectivity with Bangladesh will help linking the Northeastern region with ...

Teesta agreement not to figure during Modi visit: Bangladesh

Zee News - ‎Jun 5, 2015‎
On June 7, Modi will visit the Dhakeshwari temple in Dhaka city and inaugurate the Indian High Commission`s Chancery in the diplomatic enclave, besides addressing civil society members, intellectuals, political leaders and dignitaries at the Bangabandhu ...

Modi's 36-hr in Dhaka

The Daily Star - ‎Jun 5, 2015‎
Sheikh Hasina is likely to host a banquet dinner for Narendra Modi at the hotel. On June 7, Modi will visit theDhakeshwari temple in Dhaka city, which rarely finds itself a high profile VIP visitor. Prime Minister Modi will inaugurate the Indian High Commission's ...

PM Modi to hold talks with Bangladesh Prime Minister Sheikh Hasina in Dhaka ...

Economic Times - ‎Jun 4, 2015‎
The Prime Minister, who will arrive in Dhaka on Saturday morning, will have a tight schedule as besides holding detailed talks with his Bangladesh counterpart Sheikh Hasina, he will attend several programmes and pay a visit to the Memorial of the 1971 ...

Prime Minister Narendra Modi embarks on visit to Bangladesh

Zee News - ‎Jun 5, 2015‎
On his arrival, Modi would be accorded a ceremonial welcome in Dhaka following which he is expected to visit the National Martyr's Memorial and then the Bangabandhu Memorial Museum. He is also scheduled to visit Sri Sri Dhakeshwari temple and the ...

India, Bangladesh sign historic border pact

Kasmir Monitor - ‎12 hours ago‎
Two trans-border bus services – one on the Kolkata-Dhaka-Agartala route and another on the Dhaka-Shillong-Guwahati route – were flagged off by Modi, Hasina and West Bengal chief minister Mamata Banerjee during a ceremony in the afternoon. The first ...

Indian Prime Minister Modi in Bangladesh on maiden state visit

Bangladesh News 24 hours - ‎18 hours ago‎
This visit is going to strengthen the bond between our nations, benefitting people of our countries and our region,"Modi tweeted before leaving for Dhaka. India's Foreign Secretary S Jaishankar has termed the visit 'historic' and said it will "completely settle ...

Modi in 'goodwill' Dhaka visit

Prothom Alo (English) - ‎Jun 6, 2015‎
Modi's Sunday schedule will start with the visit at Dhakeshwari temple in Dhaka city. Then he will go to Ramakrishna Mission Math in Dhaka. From there his next destination will be the new Indian chancery at Baridhara Diplomatic Zone in Dhaka where he will ...

PM Modi's Bangladesh visit would be 'historic': Foreign Secretary S Jaishankar

Zee News - ‎Jun 5, 2015‎
"The second day of the visit would see a visit by the Prime Minister to the Dhakeshwari temple. He will then go on to visit the Ramakrishna mission. He will also to our new Chancery complex in Dhaka. He has a meeting and lunch with the President of ...

Modi leaves Saturday on two-day 'historic' Bangladesh visit

Business Standard - ‎Jun 5, 2015‎
The following day, Modi is to visit the Sri Sri Dhakeshwari National temple, the Ramakrishna Mission and the new chancery complex of the Indian High Commission in Dhaka. He would meet President Abdul Hamid and hold talks with him over lunch.

Modi's itinerary on Sunday: How to avoid the traffic

DhakaTribune - ‎12 hours ago‎
Morning: Indian Prime Minister Narendra Modi will start the second day of his two-day visit in Bangladesh fromDhakeshwari National Temple at 8am morning on Sunday. The city dwellers might face traffic congestion in the adjacent routes mainly at the ...

Narendra Modi set for historic visit to Bangladesh

India.com - ‎Jun 5, 2015‎
Modi, along with Hasina and West Bengal Chief Minister Mamata Banerjee, would flag off two bus services: the Shillong-Dhaka-Guwahati bus service, and the Kolkata-Dhaka-Agartala bus service, which is expected to give a major boost to people-to-people connectivity. The bus connection would reduce the travel ... Modi would attend a dinner hosted by Hasina. The following day, Modi is to visit the Sri Dhakeshwari temple and the Ramakrishna Mission and the Indian High Commission's new chancery complex.

Looking forward to Bangladesh visit with enthusiasm: PM Narendra Modi

Financial Express - ‎Jun 4, 2015‎
I will also visit the famous Dhakeshwari Temple in Dhaka," said the Prime Minister. He also expressed certainty about that his visit will prove to be beneficial for the people of India and Bangladesh and in the larger good of the South Asian neighbourhood.

Prime Minister embarks on visit to Bangladesh

Deccan Herald - ‎Jun 5, 2015‎
Prime Minister Narendra Modi today embarked on a "historic" visit to Bangladesh which is expected to inject a new momentum in bilateral ties as both countries will be ratifying the long-pending 'Land Boundary Agreement' besides firming up a number of key ...

Modi's Bangladesh Visit: An Opportunity To Work Out A True Partnership

Focus News - ‎Jun 5, 2015‎
His emphasis on the cultural, historical and people to people engagement, his visit to the Ramakrishna Mission inDhaka, to the Dhakeshwari Temple – the spiritual soul centre of Dhaka sends a deeper signal as well. His visit is one of those best occasions ...

Dawn of a new era

The Daily Star - ‎12 hours ago‎
When Indian Prime Minister Narendra Modi was leaving Delhi for Dhaka in the morning, he twitted a message, saying this visit would strengthen the bond between the two nations and benefit people of the two countries as well as of the region. Bangladesh PM Sheikh Hasina didn't hesitate to reciprocate. She broke the .... Today, the concluding day of his visit, Modi will go to the Dhakeshwari temple and Ramakrishna Mission in the capital. He will then inaugurate the newly constructed Indian High Commission's ...

PM Narendra Modi to leave for Bangladesh today

Newsx - ‎Jun 5, 2015‎
New Delhi: With the land swap agreement as the centerpiece, Prime Minister Narendra Modi leaves on Saturday on a two-day "historic" visit to Bangladesh where he will hold talks with his Bangladeshi counterpart Sheikh Hasina and ink several agreements, especially in the field of connectivity and trade. ... Both sides would formally ratify the LBA, which envisages transfer of 111 enclaves with a total area of 17,160.63 acres to Bangladesh, while Dhaka is to transfer 51 enclaves with an area of 7,110.02 acres to India.

Modi leaves for Bangladesh, says visit will benefit both countries, region

NetIndian - ‎Jun 5, 2015‎
... will flag off bus services on Kolkata-Dhaka-Agartala and Dhaka-Shillong-Guwahati routes. I will be visiting the Ramakrishna Mission in Dhaka. It was founded by devotees of the Belur Math in 1899. I will also visit the famousDhakeshwari Temple in Dhaka.

Commuters suffer as police block roads for Modi without prior notice

Bangladesh News 24 hours - ‎20 hours ago‎
Police in Dhaka have restricted traffic on several streets without prior notice to ensure secure movement for Indian Prime Minister Narendra Modi. ... On Sunday, he will visit the Dhakeshwari temple at Bakshi Bazar and Bangabhaban. He will also visit the ...

__._,_.___

No comments: