ইসলামোফোবিয়া : রাষ্ট্রের ভূমিকা
ভাবনা
এরশাদ মজুমদার
২২ জুলাই ২০১৫,বুধবার, ০০:০০
কুরআন, রাসূল সা: ও ইসলাম নিয়ে রাজনীতি বা সমালোচনা পাকিস্তান আমলেও ছিল, এখন স্বাধীন বাংলাদেশেও আছে। পাকি¯Íান আমলে বিদ্যাবুদ্ধির দাবিদারেরা ইসলাম ও দ্বিজাতিতত্তে¡র বিরোধিতা করতেন। পাকিস্তান আমলে কুরআন ও পতাকা অবমাননা নিয়ে বহু মামলা হয়েছে। এখন বাংলাদেশেও বিষয়টি রয়ে গেছে। সুযোগ পেলেই মতাসীন দল ও সরকার ধর্ম নিয়ে রাজনীতি শুরু করে। হেফাজতের আন্দোলন এবং ৫ মের অবস্থানকালে নাকি হেফাজতের কর্মীরা প্তি হয়ে কুরআন ও ধর্মীয় পুস্তকে আগুন দিয়েছে। বিশেষ মহলের লোকেরা কুরআন ও ধর্মীয় পুস্তকে আগুন দিয়েছে বলে গুজব রয়েছে। পোড়া বইয়ের ছবি খবরের কাগজ ও টিভিতে প্রকাশিত হয়েছে। তবে সেসব বই কুরআন কিংবা ধর্মীয় পুস্তক কি না আজো আমরা জানি না। সরকার নাকি বইয়ের হকারদের তিপূরণ হিসেবে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছে।
বাংলাদেশে বহু ইসলামি দল আছে। এদের আছে অনেক ফেরকা। তাই তারা সিয়াসাত বা রাজনীতি নিয়ে এক মোর্চা, প্ল্যাটফর্ম বা মঞ্চে একত্রিত হতে পারছেন না। ১৯৪৭ সালের আগে মুসলমানেরা শক্তিশালী মুসলিম লীগের প্ল্যাটফর্মে একত্রিত হয়েছিলেন। ব্রিটিশ আমলে বাঙালি মুসলমানরা সবচেয়ে বেশি শোষিত হয়। ব্রিটিশরা চলে গেলে মুসলমানদের ওপর শোষণ অব্যাহত থাকবে, এ ভয়ে তারা আলাদা দেশ বা রাষ্ট্রের দাবি তোলেন। ফলে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয় '৪৭ সালে। পাকি¯Íানের পূর্বাংশ নিয়ে আজকের বাংলাদেশ। বাংলাদেশকে ইসলামবিরোধী দেশে পরিণত করার জন্য এক শ্রেণীর আরবি নামধারী লোক উঠেপড়ে লেগেছেন।
বাংলাদেশে বহু বাম দল আছে, কিন্তু সবাই এক মঞ্চে একত্রিত হতে পারেননি, কিন্তু ইসলাম ও মুসলমান বিরোধিতায় তারা একমত। তারা মনে করেন, আওয়ামী লীগ আদর্শগতভাবে বামের কাছাকাছি। তাই বেশ কয়েকটি বাম দল আওয়ামী লীগে আশ্রয় নিয়েছে। এসব বাম নেতা নৌকার বাসিন্দা হয়ে নিজের দলের কর্মীদের চাঙা করতে চেষ্টা করছেন। মেনন ও ইনু নাকি দলের ইচ্ছার বিরুদ্ধে নৌকায় চড়েছেন, ফলে হায়দার আকবর খান রনো সিপিবিতে যোগ দিয়েছেন। এক সময় তারা পিকিং ও মস্কোপন্থী হিসেবে শক্ত অবস্থানে ছিলেন। ১৯৭২ থেকে '৭৫ সালের দিকে মস্কোপন্থী দলগুলো বঙ্গবন্ধুকে একদলীয় রাজনীতি চালু করার জন্য বাকশাল গঠনে উদ্বুদ্ধ করে। বঙ্গবন্ধুর পতনের পর এরাই বঙ্গবন্ধুকে গালাগাল করেছেন। ইসলামপন্থী ও বামপন্থীদের এত বিভক্তি কেন, তা জনগণ আজো বুঝতে পারেনি। হুজুরে পাক মুহাম্মদ সা: বলে গেছেন, কিয়ামতের আগে তাঁর উম্মতেরা ৭৩ ভাগ হয়ে যাবে।
বাংলাদেশ জন্মলগ্নে ছিল সমাজতান্ত্রিক দেশ। তার প্রধান বন্ধু ছিল ভারত ও রাশিয়া। ফলে সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোর প্রভাব ছিল বেশি। কালক্রমে বাংলাদেশ পুঁজিবাদের দিকে ধাবিত হতে শুরু করে। ৪৪ বছরে বাংলাদেশে ১০ হাজার কোটি টাকার মালিক বহু পরিবারের জন্ম হয়েছে। এদের কাছে রাষ্ট্রের কয়েক শ' হাজার কোটি টাকা পাওনা। রাজনৈতিক দলের সাথে হাত মিলিয়ে এসব ধনী ঠিকমতো রাজস্ব দেন না। অপর দিকে, সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক থেকে নেয়া টাকাও শোধ করেন না। পাকিস্তান আমলে ২৩ বছরে ২২ পরিবারের জন্ম হয়েছিল, যারা সবাই পুঁজির মালিক ছিলেন। পশ্চিমা পুঁজির কোনো সীমা বা নৈতিকতা নেই। ফলে পুঁজিপতিরা জগৎকে গিলে খেতে পারেন। বাংলাদেশ কোনো আদর্শিক ও নৈতিকতাপূর্ণ দেশ নয়। সাংবিধানিকভাবেই দেশ ও জাতির প্রতি কোনো ধরনের নৈতিক ওয়াদা করা হয়নি। এখন এখানে বিলিয়নিয়ারের কোনো অভাব নেই। তাদের কোনো আদর্শও নেই। এখানে কেউ বাংলাদেশী বা বাঙালি। কেউ বিএনপি বা আওয়ামী লীগ সমর্থক। পুঁজির ধারণা দুই দলেরই এক রকম। দুই দলই পুঁজিপতিদের টাকায় চলে। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের পালøা ভারী। বাংলাদেশের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক জগৎ এখন ৯০ শতাংশ ভারতের দখলে। সেদিন বাম মোর্চার এক সভায় প্রখ্যাত শিাবিদ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, 'বাংলাদেশের ঘরে ভারতীয় টিভি চ্যানেল দেখে বাংলাদেশের শিশুরা। সরকার এ ব্যাপারে নীরব দর্শক।' মনে হয়, এ ব্যাপারে সরকারের কোনো ভূমিকা নেই। এমনকি বিএনপিও এ ব্যাপারে কিছুই করেনি। আপাতদৃষ্টিতে মনে হয়, বিএনপির আদর্শ (যা এখনো স্পষ্ট নয়) আছে এবং তা আওয়ামী লীগ থেকে আলাদা। বিএনপিতে জ্ঞানীগুণীর অভাব নেই। তারা নিবেদিত নন বলে অনেকের অভিযোগ। অপো করে আছেন কখন বিএনপি মতায় আসবে এবং সবাই কিছু না কিছু সুবিধা পাবেন। অনেকেই অপো করতে না পেরে আওয়ামী ঘরানায় চলে যাওয়ার কথা ভাবছেন। মুক্তিযুদ্ধে যেমন সাধারণ সৈনিক, ছাত্র, কৃষক, শ্রমিক ও যুবকেরা প্রাণ দিয়েছেন, তেমনি চলতি সরকার বিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে বিএনপির সাধারণ কর্মীরা প্রাণ দিয়েছেন।
আমার আজকের প্রধান প্রসঙ্গ হচ্ছে ইসলাম, কুরআন ও রাসূল সা:কে নিয়ে। কয়েক দিন আগে আমার একজন প্রিয় মানুষ গাফ্ফার ভাই ইসলাম ও আলøাহর নাম নিয়ে কিছু কথা বলেছেন, যার ফলে তার 'মুসলমানিত্ব' নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তিনি দাবি করছেন, তিনি একজন ঈমানদার মুসলমান। কথা হলো, রোজার মাসে বাংলাদেশ সরকার কেনই বা ওই রকম একটি আলোচনার ব্যবস্থা করেছেন তা বোধগম্য নয়। আর আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী কেন অপ্রাসঙ্গিকভাবে আলøাহ ও কুরআন নিয়ে ওই কথাগুলো বলতে গেলেন? গাফ্ফার ভাই আমার খুবই প্রিয় মানুষ। আমি তার সাথে দৈনিক পূর্বদেশ ও দৈনিক জনপদে কাজ করেছি। তার কলাম খুবই ুরধার ও জনপ্রিয়। তিনি দৈনিক আজাদেও কাজ করেছেন। কাগজের বা মালিকের নীতি মোতাবেক লেখার অভ্যাস তার আছে। বাংলাদেশ হওয়ার পর তিনি দৈনিক জনপদে বঙ্গবন্ধুর সমালোচনা করে বেশ কয়েকটি কলাম লিখেছেন। কাগজটির মালিক ছিলেন তখনকার শিল্পমন্ত্রী হেনা সাহেব অর্থাৎ মরহুম এ এইচ এম কামরুজ্জামান। তিনি সত্যিই একজন ভালো মানুষ ছিলেন। এখন সে রকম নেতা আওয়ামী লীগে নেই।
গাফ্ফার ভাই একসময় তার অসুস্থ স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য লন্ডন চলে যান এবং সেখানেই স্থায়ীভাবে থেকে গেছেন। যাওয়ার সময় বঙ্গবন্ধু তাকে আর্থিক সহযোগিতা করেছেন। এখন তিনি লন্ডনে বসে বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে জনপ্রিয় কলাম লেখেন। তার বন্ধুরা বলে থাকেন, তিনি জীবিত লোকদের নিয়ে লেখেন না। তার সমালোচনা করে কেউ লিখতে চায় না। কারণ, প্রত্যুত্তরে তিনি বিশ্বাসযোগ্য মিথ্যা লিখে ওই লেখককে হেন¯Íা করেন অথবা বানোয়াট গল্প লেখেন। দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে তিনি লন্ডনে। স্থায়ী কোনো আয়ের ব্যবস্থা নেই। লিখে কিছু টাকা পান। বাকিটা হয়তো ভক্ত এবং সরকারের কাছ থেকে পেয়ে থাকেন। ঢাকা এলে ভক্তরা তার দেখাশোনা করেন।
আগেই বলেছি, তিনি আমার খুব প্রিয় মানুষ। জনপদে তিনি আমার সম্পাদক ছিলেন। পূর্বদেশে সহকারী সম্পাদক ছিলেন। ওই পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন বিশিষ্ট পার্লামেন্টারিয়ান মাহবুবুল হক। আওয়ামী রাজনীতির সমর্থক হিসেবে তার বিরুদ্ধে আমার কোনো মত নেই। তিনি হয়তো আদর্শগতভাবেই আওয়ামী লীগের পে লিখে থাকেন। তার এ নীতিকে সম্মান করি। কিন্তু হঠাৎ কেন আলøাহ ও কুরআন নিয়ে কথা বলতে গেলেন, তা বুঝতে পারছি না। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে এসব কথা বলার কী প্রয়োজন ছিল? এমন একটি বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন, যে বিষয়ে তার তেমন কোনো জ্ঞান নেই। এর আগে সালমান রুশদি রাসূল সা:-এর বিরুদ্ধে লিখে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন। ব্রিটিশ সরকার এখনো তাকে নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের এক নারী যিনি ইসলামবিরোধী লেখিকা হিসেবে নাম বা বদনাম কুড়িয়েছেন, তিনি তার যৌনজীবন সম্পর্কেও নানা তথ্য প্রকাশ করেছেন। পশ্চিমা দেশগুলো তার ইসলামবিরোধী ভূমিকা নিয়ে বেশ কিছুদিন হইচই করেছে। এখন তারা বুঝতে পেরেছেন, এই মহিলার মৌলিক কোনো লেখা নেই। ইসলামের বিরোধিতা করা তার ব্যবসায়। ভারতে তার 'লজ্জা' বইটি বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ১৯৭২ বা '৭৩ সালে এক কবি সাংবাদিক রাসূল সা: সম্পর্কে বাজে কবিতা লিখে দেশত্যাগী হতে বাধ্য হয়েছেন। একটি বাংলা দৈনিক রাসূল সা:-সম্পর্কে অযাচিত কৌতুক ছেপে বিপদে পড়েছিল। পরে বায়তুল মোকাররমের খতিব সাহেবের কাছে তাওবা করে সম্পাদক নি¯Íার লাভ করেন। আওয়ামী লীগের মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য আবদুল লতিফ সিদ্দিকী রাসূল সা: ও কাবা সম্পর্কে বাজে মন্তব্য করে মন্ত্রিত্ব হারিয়ে জেলখানায় গিয়েছিলেন। সম্প্রতি আদালত তাকে মুক্তি দিয়েছেন। এখন সরকার তার সংসদ সদস্য পদ বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। লোকে বলে, লতিফ সিদ্দিকী আসলে প্রধানমন্ত্রীর পুত্রের বিরুদ্ধে কথা বলেই বিপদে পড়েছেন।
আলøাহ পাকের নিরানব্বই নাম কালামে পাকেই উলেøখিত রয়েছে। আলøাহ পাকের গুণবাচক নামগুলোর সাথে তৎকালীন আরব দেবতা বা মূর্তির কোনো সম্পর্ক কখনোই ছিল না। আলøাহ কোনো দেবতার নামও ধারণ করেননি। এটা গাফফার চৌধুরীর অজ্ঞতা। নিশ্চয়ই তিনি অজ্ঞতাবশতই কথাগুলো বলেছেন। না হয় কোনো বিতর্ক সৃষ্টি করার চেষ্টা করছেন। এখন ভারতীয় কোনো প্রকাশক যদি গাফফার সাহেবের নাম উলেøখ করে প্রকাশ করেন যে, মুসলমানদের আলøাহর গুণবাচক নামগুলো হিন্দু দেবতাদের নাম। আর আনন্দবাজার গাফফার চৌধুরী সাহেবের নামে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করে, তাহলে বলার কিছু থাকবে না। ১৯৭১ সালে চৌধুরী সাহেবের সাথে আনন্দবাজারের আত্মীয়তা তৈরি হয়।
আল কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে আলøাহ পাকের গুণ বর্ণনা করতে গিয়ে নিরানব্বই নামের কথা এসেছে। আলøাহ পাকের গুণের কোনো সীমা নেই। তা বর্ণনা করার মতাও মানুষের নেই। আলøাহ পাকের মূল নাম হচ্ছে আলøাহ। তাঁকে ইলাহা বা ইলাহ বলেও ডাকা হয়। যেমন ধরুন আমরা যখন উচ্চারণ করি 'লা ইলাহা ইলøালøাহ' তখন বলি, আলøাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। ইলাহা মানে, উপাস্য। আলøাহ ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই। সনাতন ধর্মে বহু ইলাহ বা উপাস্যের নাম আছে। আবার যখন বিসমিলøাহির রাহমানির রাহিম পড়ি, তখন আলøাহ পাকের গুণাবলির কথা বলি। বিসমিলøাহ (বা ইসম আলøাহ) মানে, আলøাহর নাম নিয়ে শুরু করছি, যিনি রহমান ও রহিম। রহমান ও রহিম আলøাহর গুণবাচক নাম। আরবে এ নামে কোনো দেবতা কখনোই ছিল না। যেমনÑ আবদুল গাফ্ফার মানে পরম মাশীলের আবদ (দাস)। গাফ্ফার ভাই ইচ্ছা করলে নিজের নাম অনুবাদ করে বলতে পারেন ভগবান দাস চৌধুরী। সূরা ফাতিহাকে উম্মুল কুরআন বলা হয়। সূরা ফাতিহায় আলøাহ পাকের গুণাবলির বর্ণনা ও ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। আলøাহকে রাব্বুল আলামিন বলা হয়েছে। মানে, তিনি সব জগতের প্রতিপালক। তিনি নিজেকে সব সৃষ্টির প্রতিপালক হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। সূরা ফাতিহার তাফসির করার জন্য মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ৩৫০ পৃষ্ঠার একটি বই লিখেছেন; সেটা চৌধুরী সাহেব পড়তে পারেন। আলøাহ পাকের একটি মহা গুরুত্বপূর্ণ নাম হলো আদলু। মানে তিনিই শ্রেষ্ঠ বিচারক। আদলু শব্দ থেকেই আদালত। তাই আমরা বলে থাকি, আলøাহ বা খোদার আদালত। বাংলাদেশে আলøাহর কোনো আদালত নেই বা আলøাহর আইনেরও তেমন চর্চা নেই। মাঝে মাঝে অজ্ঞতার কারণে কুরআন ও সুন্নাহ-বিরোধী রায়ও দেয়া হয় এসব আদালতে। বাংলাদেশ কার্যত রাষ্ট্রধর্মমুক্ত রাষ্ট্র। এটা নাকি ভদ্রলোকের রাষ্ট্র হওয়ার জন্য একটি অপরিহার্য গুণ। ফলে এ দেশে যেকোনো কবি, লেখক, বুদ্ধিজীবী, আইনজ্ঞ সেকুলারিজমের নামে বা ধর্মহীনতার নামাবলি পরে ইসলামের বিরুদ্ধে যখন তখন যা ইচ্ছা, তাই বলতে পারেন। বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠা করেছেন প্রধানত মুসলমানরা। মুক্তিযোদ্ধাদের ৯০ শতাংশ ছিলেন মুসলমান। কিন্তু বর্তমান সরকার এ বিষয়টি কার্যত স্বীকার করতে চায় না। তারা বলে, ধর্মমুক্ত শুধু বাঙালিরা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু নিজেই মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকি¯Íানের কারাগারে ছিলেন।
মক্কা বিজয়ের পর পবিত্র কাবাঘর বা বায়তুলøাহ শরিফে ৩৬০টি মূর্তি পাওয়া গেছে। এসব মূর্তির নাম আলøাহ পাকের গুণাবলির নাম ছিল না। গাফফার ভাই কোন কিতাব বা বই থেকে তথ্য বা ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তা উলেøখ করলে বিষয়টি স্পষ্ট হতো। হিন্দু ধর্মে নানা ধরনের দেবতা আছে, তাদের কারো নামই আলøাহ পাকের গুণাবলির মতো নয়। হিন্দু ধর্মে নাকি ৩৩ কোটি দেবতা আছে। এর ভেতর ইঁদুর, সাপ, হনুমানসহ আর বহু দেবতা আছে। আমরা এসব দেবতাকে অসম্মান করি না। ইসলামে এর কোনো অনুমতি নেই। ইসলাম এবং কুরআন জগতের যথাক্রমে শেষ ধর্ম ও কিতাব। কেউ এটা মানলে ভালো, না মানলে আলøাহ পাকই তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। অতীতের সব নবী-রাসূল আ: এবং তাদের কিতাব ও সহিফার বিষয়ে কুরআনে উলিøখিত আছে।
ইমরান সরকার গাফ্ফার ভাইয়ের বক্তব্য নাকি বহুবার পড়েছেন। শুধু ইমরান সরকার বললাম, কারণ তিনি এখন 'দেশখ্যাত'। তার ঠিকানা নাকি শাহবাগ। তাকে অনেকেই সম্মান করে শাহবাগী বলে থাকেন। শাহবাগী সাহেব নাকি গাফ্ফার ভাইয়ের বক্তব্যে ইসলামবিরোধী কিছু পাননি। এটা ইমরান সাহেবের এক ধরনের 'ফতোয়া'। ইমরান আরো বলেছেন, গাফ্ফার ভাইয়ের বক্তব্য নাকি মওদূদীপন্থী বা ওহাবি ইসলামের বিরুদ্ধে। এটা হতে পারে। ইমরান সাহেবের উচিত ছিল 'মওদূদীপন্থী' ইসলামের একটু ব্যাখ্যা দেয়া। তার আন্দোলনও এখন বহু ভাগে বিভক্ত বলে শুনেছি। ইমরানকে এখন নাকি সরকার সমর্থন করে না। ইসলাম ও কুরআন ব্যাখ্যা করার জন্য মাঝে মাঝে মাওলানা মোহাম্মদ হাবিবুলøাহ সাহেবের ভাতিজা শাহরিয়ার কবীরকেও টিভিতে হাজির হতে দেখি। গাফ্ফার ভাই কী বলেছেন তা পুরোটাই প্রকাশিত হওয়া উচিত বলে মনে করি। তাকে ধর্মবিরোধী লোক মনে করি না। এর আগে মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফ বলেছিলেন, তিনি হিন্দু-মুসলমান কোনোটাই না। কেউ এটা নিয়ে তেমন কিছু বলেননি। তিনি যদি ধর্মহীন বা ধর্মমুক্ত থাকেন, তাহলে কার কী বলার আছে? কিন্তু তিনি যদি আলøাহ, কুরআন ও রাসূল সা:-এর বিরুদ্ধে কিছু বলেন, তাহলে মুসলমানেরা আপত্তি বা প্রতিবাদ করতে পারে। কারণ, এই প্রতিবাদ করা তাদের জন্য বাধ্যতামূলক। পরধর্মের নিন্দা বা সমালোচনা করার অধিকার কারোই নেই। শুধু ইসলাম নয়, কোনো ধর্মেরই সমালোচনা করা যাবে না।
সমস্যা হলো, সরকার এ ব্যাপারে কোনো ভূমিকা পালন করে না। ভোটের সময় রাষ্ট্র ও রাজনীতিকেরা ধার্মিক হয়ে যান। তখন হিজাব ও টুপি পরতে থাকেন। মসজিদ-মাদরাসায় দান করেন।
লেখক : কবি ও ঐতিহ্য গবেষক
ershadmz@gmail.com - See more at: http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/39771#sthash.MiJCumnT.dpuf
-- বাংলাদেশে বহু ইসলামি দল আছে। এদের আছে অনেক ফেরকা। তাই তারা সিয়াসাত বা রাজনীতি নিয়ে এক মোর্চা, প্ল্যাটফর্ম বা মঞ্চে একত্রিত হতে পারছেন না। ১৯৪৭ সালের আগে মুসলমানেরা শক্তিশালী মুসলিম লীগের প্ল্যাটফর্মে একত্রিত হয়েছিলেন। ব্রিটিশ আমলে বাঙালি মুসলমানরা সবচেয়ে বেশি শোষিত হয়। ব্রিটিশরা চলে গেলে মুসলমানদের ওপর শোষণ অব্যাহত থাকবে, এ ভয়ে তারা আলাদা দেশ বা রাষ্ট্রের দাবি তোলেন। ফলে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয় '৪৭ সালে। পাকি¯Íানের পূর্বাংশ নিয়ে আজকের বাংলাদেশ। বাংলাদেশকে ইসলামবিরোধী দেশে পরিণত করার জন্য এক শ্রেণীর আরবি নামধারী লোক উঠেপড়ে লেগেছেন।
বাংলাদেশে বহু বাম দল আছে, কিন্তু সবাই এক মঞ্চে একত্রিত হতে পারেননি, কিন্তু ইসলাম ও মুসলমান বিরোধিতায় তারা একমত। তারা মনে করেন, আওয়ামী লীগ আদর্শগতভাবে বামের কাছাকাছি। তাই বেশ কয়েকটি বাম দল আওয়ামী লীগে আশ্রয় নিয়েছে। এসব বাম নেতা নৌকার বাসিন্দা হয়ে নিজের দলের কর্মীদের চাঙা করতে চেষ্টা করছেন। মেনন ও ইনু নাকি দলের ইচ্ছার বিরুদ্ধে নৌকায় চড়েছেন, ফলে হায়দার আকবর খান রনো সিপিবিতে যোগ দিয়েছেন। এক সময় তারা পিকিং ও মস্কোপন্থী হিসেবে শক্ত অবস্থানে ছিলেন। ১৯৭২ থেকে '৭৫ সালের দিকে মস্কোপন্থী দলগুলো বঙ্গবন্ধুকে একদলীয় রাজনীতি চালু করার জন্য বাকশাল গঠনে উদ্বুদ্ধ করে। বঙ্গবন্ধুর পতনের পর এরাই বঙ্গবন্ধুকে গালাগাল করেছেন। ইসলামপন্থী ও বামপন্থীদের এত বিভক্তি কেন, তা জনগণ আজো বুঝতে পারেনি। হুজুরে পাক মুহাম্মদ সা: বলে গেছেন, কিয়ামতের আগে তাঁর উম্মতেরা ৭৩ ভাগ হয়ে যাবে।
বাংলাদেশ জন্মলগ্নে ছিল সমাজতান্ত্রিক দেশ। তার প্রধান বন্ধু ছিল ভারত ও রাশিয়া। ফলে সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোর প্রভাব ছিল বেশি। কালক্রমে বাংলাদেশ পুঁজিবাদের দিকে ধাবিত হতে শুরু করে। ৪৪ বছরে বাংলাদেশে ১০ হাজার কোটি টাকার মালিক বহু পরিবারের জন্ম হয়েছে। এদের কাছে রাষ্ট্রের কয়েক শ' হাজার কোটি টাকা পাওনা। রাজনৈতিক দলের সাথে হাত মিলিয়ে এসব ধনী ঠিকমতো রাজস্ব দেন না। অপর দিকে, সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক থেকে নেয়া টাকাও শোধ করেন না। পাকিস্তান আমলে ২৩ বছরে ২২ পরিবারের জন্ম হয়েছিল, যারা সবাই পুঁজির মালিক ছিলেন। পশ্চিমা পুঁজির কোনো সীমা বা নৈতিকতা নেই। ফলে পুঁজিপতিরা জগৎকে গিলে খেতে পারেন। বাংলাদেশ কোনো আদর্শিক ও নৈতিকতাপূর্ণ দেশ নয়। সাংবিধানিকভাবেই দেশ ও জাতির প্রতি কোনো ধরনের নৈতিক ওয়াদা করা হয়নি। এখন এখানে বিলিয়নিয়ারের কোনো অভাব নেই। তাদের কোনো আদর্শও নেই। এখানে কেউ বাংলাদেশী বা বাঙালি। কেউ বিএনপি বা আওয়ামী লীগ সমর্থক। পুঁজির ধারণা দুই দলেরই এক রকম। দুই দলই পুঁজিপতিদের টাকায় চলে। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের পালøা ভারী। বাংলাদেশের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক জগৎ এখন ৯০ শতাংশ ভারতের দখলে। সেদিন বাম মোর্চার এক সভায় প্রখ্যাত শিাবিদ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, 'বাংলাদেশের ঘরে ভারতীয় টিভি চ্যানেল দেখে বাংলাদেশের শিশুরা। সরকার এ ব্যাপারে নীরব দর্শক।' মনে হয়, এ ব্যাপারে সরকারের কোনো ভূমিকা নেই। এমনকি বিএনপিও এ ব্যাপারে কিছুই করেনি। আপাতদৃষ্টিতে মনে হয়, বিএনপির আদর্শ (যা এখনো স্পষ্ট নয়) আছে এবং তা আওয়ামী লীগ থেকে আলাদা। বিএনপিতে জ্ঞানীগুণীর অভাব নেই। তারা নিবেদিত নন বলে অনেকের অভিযোগ। অপো করে আছেন কখন বিএনপি মতায় আসবে এবং সবাই কিছু না কিছু সুবিধা পাবেন। অনেকেই অপো করতে না পেরে আওয়ামী ঘরানায় চলে যাওয়ার কথা ভাবছেন। মুক্তিযুদ্ধে যেমন সাধারণ সৈনিক, ছাত্র, কৃষক, শ্রমিক ও যুবকেরা প্রাণ দিয়েছেন, তেমনি চলতি সরকার বিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে বিএনপির সাধারণ কর্মীরা প্রাণ দিয়েছেন।
আমার আজকের প্রধান প্রসঙ্গ হচ্ছে ইসলাম, কুরআন ও রাসূল সা:কে নিয়ে। কয়েক দিন আগে আমার একজন প্রিয় মানুষ গাফ্ফার ভাই ইসলাম ও আলøাহর নাম নিয়ে কিছু কথা বলেছেন, যার ফলে তার 'মুসলমানিত্ব' নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তিনি দাবি করছেন, তিনি একজন ঈমানদার মুসলমান। কথা হলো, রোজার মাসে বাংলাদেশ সরকার কেনই বা ওই রকম একটি আলোচনার ব্যবস্থা করেছেন তা বোধগম্য নয়। আর আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী কেন অপ্রাসঙ্গিকভাবে আলøাহ ও কুরআন নিয়ে ওই কথাগুলো বলতে গেলেন? গাফ্ফার ভাই আমার খুবই প্রিয় মানুষ। আমি তার সাথে দৈনিক পূর্বদেশ ও দৈনিক জনপদে কাজ করেছি। তার কলাম খুবই ুরধার ও জনপ্রিয়। তিনি দৈনিক আজাদেও কাজ করেছেন। কাগজের বা মালিকের নীতি মোতাবেক লেখার অভ্যাস তার আছে। বাংলাদেশ হওয়ার পর তিনি দৈনিক জনপদে বঙ্গবন্ধুর সমালোচনা করে বেশ কয়েকটি কলাম লিখেছেন। কাগজটির মালিক ছিলেন তখনকার শিল্পমন্ত্রী হেনা সাহেব অর্থাৎ মরহুম এ এইচ এম কামরুজ্জামান। তিনি সত্যিই একজন ভালো মানুষ ছিলেন। এখন সে রকম নেতা আওয়ামী লীগে নেই।
গাফ্ফার ভাই একসময় তার অসুস্থ স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য লন্ডন চলে যান এবং সেখানেই স্থায়ীভাবে থেকে গেছেন। যাওয়ার সময় বঙ্গবন্ধু তাকে আর্থিক সহযোগিতা করেছেন। এখন তিনি লন্ডনে বসে বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে জনপ্রিয় কলাম লেখেন। তার বন্ধুরা বলে থাকেন, তিনি জীবিত লোকদের নিয়ে লেখেন না। তার সমালোচনা করে কেউ লিখতে চায় না। কারণ, প্রত্যুত্তরে তিনি বিশ্বাসযোগ্য মিথ্যা লিখে ওই লেখককে হেন¯Íা করেন অথবা বানোয়াট গল্প লেখেন। দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে তিনি লন্ডনে। স্থায়ী কোনো আয়ের ব্যবস্থা নেই। লিখে কিছু টাকা পান। বাকিটা হয়তো ভক্ত এবং সরকারের কাছ থেকে পেয়ে থাকেন। ঢাকা এলে ভক্তরা তার দেখাশোনা করেন।
আগেই বলেছি, তিনি আমার খুব প্রিয় মানুষ। জনপদে তিনি আমার সম্পাদক ছিলেন। পূর্বদেশে সহকারী সম্পাদক ছিলেন। ওই পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন বিশিষ্ট পার্লামেন্টারিয়ান মাহবুবুল হক। আওয়ামী রাজনীতির সমর্থক হিসেবে তার বিরুদ্ধে আমার কোনো মত নেই। তিনি হয়তো আদর্শগতভাবেই আওয়ামী লীগের পে লিখে থাকেন। তার এ নীতিকে সম্মান করি। কিন্তু হঠাৎ কেন আলøাহ ও কুরআন নিয়ে কথা বলতে গেলেন, তা বুঝতে পারছি না। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে এসব কথা বলার কী প্রয়োজন ছিল? এমন একটি বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন, যে বিষয়ে তার তেমন কোনো জ্ঞান নেই। এর আগে সালমান রুশদি রাসূল সা:-এর বিরুদ্ধে লিখে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন। ব্রিটিশ সরকার এখনো তাকে নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের এক নারী যিনি ইসলামবিরোধী লেখিকা হিসেবে নাম বা বদনাম কুড়িয়েছেন, তিনি তার যৌনজীবন সম্পর্কেও নানা তথ্য প্রকাশ করেছেন। পশ্চিমা দেশগুলো তার ইসলামবিরোধী ভূমিকা নিয়ে বেশ কিছুদিন হইচই করেছে। এখন তারা বুঝতে পেরেছেন, এই মহিলার মৌলিক কোনো লেখা নেই। ইসলামের বিরোধিতা করা তার ব্যবসায়। ভারতে তার 'লজ্জা' বইটি বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ১৯৭২ বা '৭৩ সালে এক কবি সাংবাদিক রাসূল সা: সম্পর্কে বাজে কবিতা লিখে দেশত্যাগী হতে বাধ্য হয়েছেন। একটি বাংলা দৈনিক রাসূল সা:-সম্পর্কে অযাচিত কৌতুক ছেপে বিপদে পড়েছিল। পরে বায়তুল মোকাররমের খতিব সাহেবের কাছে তাওবা করে সম্পাদক নি¯Íার লাভ করেন। আওয়ামী লীগের মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য আবদুল লতিফ সিদ্দিকী রাসূল সা: ও কাবা সম্পর্কে বাজে মন্তব্য করে মন্ত্রিত্ব হারিয়ে জেলখানায় গিয়েছিলেন। সম্প্রতি আদালত তাকে মুক্তি দিয়েছেন। এখন সরকার তার সংসদ সদস্য পদ বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। লোকে বলে, লতিফ সিদ্দিকী আসলে প্রধানমন্ত্রীর পুত্রের বিরুদ্ধে কথা বলেই বিপদে পড়েছেন।
আলøাহ পাকের নিরানব্বই নাম কালামে পাকেই উলেøখিত রয়েছে। আলøাহ পাকের গুণবাচক নামগুলোর সাথে তৎকালীন আরব দেবতা বা মূর্তির কোনো সম্পর্ক কখনোই ছিল না। আলøাহ কোনো দেবতার নামও ধারণ করেননি। এটা গাফফার চৌধুরীর অজ্ঞতা। নিশ্চয়ই তিনি অজ্ঞতাবশতই কথাগুলো বলেছেন। না হয় কোনো বিতর্ক সৃষ্টি করার চেষ্টা করছেন। এখন ভারতীয় কোনো প্রকাশক যদি গাফফার সাহেবের নাম উলেøখ করে প্রকাশ করেন যে, মুসলমানদের আলøাহর গুণবাচক নামগুলো হিন্দু দেবতাদের নাম। আর আনন্দবাজার গাফফার চৌধুরী সাহেবের নামে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করে, তাহলে বলার কিছু থাকবে না। ১৯৭১ সালে চৌধুরী সাহেবের সাথে আনন্দবাজারের আত্মীয়তা তৈরি হয়।
আল কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে আলøাহ পাকের গুণ বর্ণনা করতে গিয়ে নিরানব্বই নামের কথা এসেছে। আলøাহ পাকের গুণের কোনো সীমা নেই। তা বর্ণনা করার মতাও মানুষের নেই। আলøাহ পাকের মূল নাম হচ্ছে আলøাহ। তাঁকে ইলাহা বা ইলাহ বলেও ডাকা হয়। যেমন ধরুন আমরা যখন উচ্চারণ করি 'লা ইলাহা ইলøালøাহ' তখন বলি, আলøাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। ইলাহা মানে, উপাস্য। আলøাহ ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই। সনাতন ধর্মে বহু ইলাহ বা উপাস্যের নাম আছে। আবার যখন বিসমিলøাহির রাহমানির রাহিম পড়ি, তখন আলøাহ পাকের গুণাবলির কথা বলি। বিসমিলøাহ (বা ইসম আলøাহ) মানে, আলøাহর নাম নিয়ে শুরু করছি, যিনি রহমান ও রহিম। রহমান ও রহিম আলøাহর গুণবাচক নাম। আরবে এ নামে কোনো দেবতা কখনোই ছিল না। যেমনÑ আবদুল গাফ্ফার মানে পরম মাশীলের আবদ (দাস)। গাফ্ফার ভাই ইচ্ছা করলে নিজের নাম অনুবাদ করে বলতে পারেন ভগবান দাস চৌধুরী। সূরা ফাতিহাকে উম্মুল কুরআন বলা হয়। সূরা ফাতিহায় আলøাহ পাকের গুণাবলির বর্ণনা ও ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। আলøাহকে রাব্বুল আলামিন বলা হয়েছে। মানে, তিনি সব জগতের প্রতিপালক। তিনি নিজেকে সব সৃষ্টির প্রতিপালক হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। সূরা ফাতিহার তাফসির করার জন্য মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ৩৫০ পৃষ্ঠার একটি বই লিখেছেন; সেটা চৌধুরী সাহেব পড়তে পারেন। আলøাহ পাকের একটি মহা গুরুত্বপূর্ণ নাম হলো আদলু। মানে তিনিই শ্রেষ্ঠ বিচারক। আদলু শব্দ থেকেই আদালত। তাই আমরা বলে থাকি, আলøাহ বা খোদার আদালত। বাংলাদেশে আলøাহর কোনো আদালত নেই বা আলøাহর আইনেরও তেমন চর্চা নেই। মাঝে মাঝে অজ্ঞতার কারণে কুরআন ও সুন্নাহ-বিরোধী রায়ও দেয়া হয় এসব আদালতে। বাংলাদেশ কার্যত রাষ্ট্রধর্মমুক্ত রাষ্ট্র। এটা নাকি ভদ্রলোকের রাষ্ট্র হওয়ার জন্য একটি অপরিহার্য গুণ। ফলে এ দেশে যেকোনো কবি, লেখক, বুদ্ধিজীবী, আইনজ্ঞ সেকুলারিজমের নামে বা ধর্মহীনতার নামাবলি পরে ইসলামের বিরুদ্ধে যখন তখন যা ইচ্ছা, তাই বলতে পারেন। বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠা করেছেন প্রধানত মুসলমানরা। মুক্তিযোদ্ধাদের ৯০ শতাংশ ছিলেন মুসলমান। কিন্তু বর্তমান সরকার এ বিষয়টি কার্যত স্বীকার করতে চায় না। তারা বলে, ধর্মমুক্ত শুধু বাঙালিরা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু নিজেই মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকি¯Íানের কারাগারে ছিলেন।
মক্কা বিজয়ের পর পবিত্র কাবাঘর বা বায়তুলøাহ শরিফে ৩৬০টি মূর্তি পাওয়া গেছে। এসব মূর্তির নাম আলøাহ পাকের গুণাবলির নাম ছিল না। গাফফার ভাই কোন কিতাব বা বই থেকে তথ্য বা ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তা উলেøখ করলে বিষয়টি স্পষ্ট হতো। হিন্দু ধর্মে নানা ধরনের দেবতা আছে, তাদের কারো নামই আলøাহ পাকের গুণাবলির মতো নয়। হিন্দু ধর্মে নাকি ৩৩ কোটি দেবতা আছে। এর ভেতর ইঁদুর, সাপ, হনুমানসহ আর বহু দেবতা আছে। আমরা এসব দেবতাকে অসম্মান করি না। ইসলামে এর কোনো অনুমতি নেই। ইসলাম এবং কুরআন জগতের যথাক্রমে শেষ ধর্ম ও কিতাব। কেউ এটা মানলে ভালো, না মানলে আলøাহ পাকই তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। অতীতের সব নবী-রাসূল আ: এবং তাদের কিতাব ও সহিফার বিষয়ে কুরআনে উলিøখিত আছে।
ইমরান সরকার গাফ্ফার ভাইয়ের বক্তব্য নাকি বহুবার পড়েছেন। শুধু ইমরান সরকার বললাম, কারণ তিনি এখন 'দেশখ্যাত'। তার ঠিকানা নাকি শাহবাগ। তাকে অনেকেই সম্মান করে শাহবাগী বলে থাকেন। শাহবাগী সাহেব নাকি গাফ্ফার ভাইয়ের বক্তব্যে ইসলামবিরোধী কিছু পাননি। এটা ইমরান সাহেবের এক ধরনের 'ফতোয়া'। ইমরান আরো বলেছেন, গাফ্ফার ভাইয়ের বক্তব্য নাকি মওদূদীপন্থী বা ওহাবি ইসলামের বিরুদ্ধে। এটা হতে পারে। ইমরান সাহেবের উচিত ছিল 'মওদূদীপন্থী' ইসলামের একটু ব্যাখ্যা দেয়া। তার আন্দোলনও এখন বহু ভাগে বিভক্ত বলে শুনেছি। ইমরানকে এখন নাকি সরকার সমর্থন করে না। ইসলাম ও কুরআন ব্যাখ্যা করার জন্য মাঝে মাঝে মাওলানা মোহাম্মদ হাবিবুলøাহ সাহেবের ভাতিজা শাহরিয়ার কবীরকেও টিভিতে হাজির হতে দেখি। গাফ্ফার ভাই কী বলেছেন তা পুরোটাই প্রকাশিত হওয়া উচিত বলে মনে করি। তাকে ধর্মবিরোধী লোক মনে করি না। এর আগে মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফ বলেছিলেন, তিনি হিন্দু-মুসলমান কোনোটাই না। কেউ এটা নিয়ে তেমন কিছু বলেননি। তিনি যদি ধর্মহীন বা ধর্মমুক্ত থাকেন, তাহলে কার কী বলার আছে? কিন্তু তিনি যদি আলøাহ, কুরআন ও রাসূল সা:-এর বিরুদ্ধে কিছু বলেন, তাহলে মুসলমানেরা আপত্তি বা প্রতিবাদ করতে পারে। কারণ, এই প্রতিবাদ করা তাদের জন্য বাধ্যতামূলক। পরধর্মের নিন্দা বা সমালোচনা করার অধিকার কারোই নেই। শুধু ইসলাম নয়, কোনো ধর্মেরই সমালোচনা করা যাবে না।
সমস্যা হলো, সরকার এ ব্যাপারে কোনো ভূমিকা পালন করে না। ভোটের সময় রাষ্ট্র ও রাজনীতিকেরা ধার্মিক হয়ে যান। তখন হিজাব ও টুপি পরতে থাকেন। মসজিদ-মাদরাসায় দান করেন।
লেখক : কবি ও ঐতিহ্য গবেষক
ershadmz@gmail.com - See more at: http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/39771#sthash.MiJCumnT.dpuf
Pl see my blogs;
Feel free -- and I request you -- to forward this newsletter to your lists and friends!
No comments:
Post a Comment