Saturday, July 11, 2015

মাহে রমজান ধর্ম ও রাজনীতি নিয়ে এক মার্কিন মুসলমানের অবিরাম সংগ্রাম রেমজিয়া সোলায়মান

মাহে রমজান
ধর্ম ও রাজনীতি নিয়ে এক মার্কিন মুসলমানের অবিরাম সংগ্রাম
রেমজিয়া সোলায়মান
১০ জুলাই ২০১৫,শুক্রবার, ১৫:৫৩
যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসি রাজ্য। একজন মুস
যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসি রাজ্য। একজন মুসলিম নারী অ্যাক্টিভিস্ট হিসেবে কাজ করাটা সেখানে সহজ ছিল না। ২০১১ সালে রাজ্য পরিষদে শরিয়া নিষিদ্ধ করে একটি বিল আনা হলো। তবে ভোটাভুটিতে সেটা প্রত্যাখ্যাত হলো। এরপর গভর্নর স্থানীয় ও ধর্মান্তরিত সমর আলীকে রাজ্যের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিভাগের আন্তর্জাতিক শাখার সর্বোচ্চ পদে নিয়োগ করলে সমালোচনা ওঠে। অভিযোগ ওঠে, গভর্নর নাকি শরিয়ার প্রতি সহানুভূতিসম্পন্ন। এটাও যৌক্তিকভাবে মোকাবিলা করা হয়েছিল।
তবে মুসলিম আমেরিকান হিসেবে এসব চ্যালেঞ্জের গুরুত্ব বুঝতে পেরে উদ্দীপ্ত হয়েছিলাম, আরো বেশি বেশি রাজনৈতিক-প্রক্রিয়ায় জড়িয়ে পড়েছিলাম।
টেনেসি প্রায় ৬৩ হাজার মুসলমানের বাস। এদের বেশির ভাগই নিবন্ধিত ভোটার। তাদের অনেকে ১৯৯০-এর দশক থেকে রাজ্যটিতে বাস করছেন। বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সদস্য তারা : কুর্দি, সোমালি, পাকিস্তানি, বাংলাদেশী, আফগান, তুর্কি, আফ্রিকান আমেরিকান। আবার অনেকে ধর্মান্তরিত।
রাজনৈতিক নেতারা যাতে মুসলমানদের কথা শোনেন কিংবা আরো ব্যাপক পরিসরে টেনেসি মুসলমানদের সম্পর্কে ভুল ধারণা দূর করার লক্ষ্যে সেজন্য গত বছরের শেষ দিকে আমি আমেরিকান সেন্টার ফর আউটরিচ (এসিও) প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করি।
মুসলমানদের প্রয়োজন তুলে ধরা, তাদের সহায়তা করা, নির্দেশনা দেয়া হয়ে দাঁড়ায় এসিও'র মূল কাজ। তারা কোনো দলবাজির সাথে নেই। তবে ধর্ম, বর্ণ, জেন্ডার ও অর্থনৈতিক মর্যাদা-নির্বিশেষে সবাই যাতে গণতান্ত্রিক-প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারে, সেটা সমুন্নত রাখার কাজ তারা হাতে নেন। এসব লক্ষ্য সাধনের জন্য মুসলিম সমাজ ও টেনেসি সরকারের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তাছাড়া ব্যক্তিবিশেষ যাতে তার নিজ সমাজের পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে, সে উদ্যোগও নেয়া হয়।
সমাজের সাথে পুরোপুরি সম্পৃক্ত না হলে সমাজে নিজের অবস্থান তুলে ধরা সম্ভব নয়। এ কারণে সব প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ দরকার। অথচ অনেকে সহজেই হাল ছেড়ে দেয়। তারা মনে করে, সমাজ পরিবর্তনের প্রক্রিয়া বেশ কঠিন, কী দরকার বিফল প্রয়াসে জড়িত থাকার।
এই ধারণা দূর করে তাদেরকে নাগরিক কার্যক্রমে জড়িত করার দিকে আমরা মনোযোগী হয়েছি। আমারা তাদেরকে প্রতিটি স্তরে সম্পৃক্ত হতে বলেছি, কিভাবে সেটা সম্ভব সেটাও দেখিয়ে দিয়েছি। এখন প্রত্যেকেই নিজ নিজ বিষয়ে কথা বলতে পারে। আর সংগঠন হিসেবে এসিও প্রয়োজনের সময় আমাদের সম্প্রদায়কে রক্ষা করতে এগিয়ে আসছে।
এই প্রয়াসের ফলে শরিয়াবিরোধী আইন প্রণয়ন বন্ধ হয়। আইনটি এমনভাবে সংশোধন করা হয়েছে, যাতে ইসলামের উল্লেখ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে না থাকে।
মুসলমানরা যখন টেনিসির মুরফ্রেসবরোতে একটি মসজিদ কাম ইসলামি সেন্টার নির্মাণের উদ্যোগ নেয়, তখন তারা হুমকি, পেশিশক্তির মুখে পড়েছিল, এমনকি আদালতের নিষেধাজ্ঞার ভয়েও ছিল। কিন্তু তৃণমূল পর্যায়ে এসিও'র তৎপরতার ফলে গত বছরের ১০ আগস্ট উদ্বোধন করা সম্ভব হয়।
সংগঠনটির আরেকটি কাজ হয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় মুসলিমরা যাতে ভোট দেয়া থেকে বিরত না থাকে। সংগঠনটি কোনো প্রার্থীকে সমর্থন করবে না। কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীদের কাছে যাতে মুসলমানরা গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হয়, সেজন্য তাদেরকে নির্বাচনী-প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করা জরুরি।
এসব কাজ করতে গিয়ে অনেক সময়ই হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে। ঘৃণার শিকার হতে হয়েছে। এতে বোঝা গেছে, রাজ্য থেকে ইসলাম-ভীতি এখনো দূর হয়নি।
তবে তা দূর করতে হবে। সেটা সম্ভব সক্রিয় ভূমিকা পালনের মাধ্যমে।
অনুবাদ : আসিফ হাসান
-

No comments: