Tuesday, March 3, 2015

অভিজিৎ শহীদ হয়েছে। শহীদের মর্যাদা তাঁর প্রাপ্য।

সবাই পারেনা পিতাকে অতিক্রম করতে। সন্দীপ রায় পারেননি পিতা সত্যজিৎ রায়কে অতিক্রম করতে। পারেননি প্রখ্যাত কমিউনিস্ট প্রসাদ রায়ের পুত্র হাল আমলের সাংবাদিক অঞ্জন রায়। কে বলবে নিচের এই স্ট্যাটাস টি আমাদের ডা পিনাকীদা'র বাবার লেখা? দীর্ঘকায় পিনাকিদাও পারেননি তার বাবাকে অতিক্রম করতে। পড়ে দেখুন - বোঝা যাবে পিতা পুত্রের বোধের ফারাকটি!
"গত আটচল্লিশ ঘণ্টা থেকে অভিজিতের কথা আপনা আপনি চলে আসছে। ওর সঙ্গে একবার কথা বলার সুযোগ হয়েছিল ওদের মগবাজারের বাসায়। গিয়েছিলাম অজয়দার সঙ্গে দেখা করতে। সামান্য আলাপে চিনতে পেরেছিলাম একজন সাচ্চা মানুষকে। তাঁর মৃত্যু আমার কাছে এক বজ্র-নির্ঘোষী প্রতিবাদ--প্রতিবাদ ধর্মোন্মাদদের বিরুদ্ধে, প্রতিবাদ ফ্যসিবাদের বিরুদ্ধে, প্রতিবাদ তাবৎ শোষকদের বিরুদ্ধে, প্রতিবাদ ভাবরাজ্যের প্রতিটি ক্ষেত্রে যুক্তিবিজ্ঞাববিরোধী অতিপ্রাকৃতবাদ, ঈশ্বরবাদ, দ্বৈতবাদ, অদ্বৈতবাদ, দ্বৈতাদ্বৈতবাদ প্রভৃতি নানা ভাববাদী দর্শনের বিরুদ্ধে, বিশুদ্ধ বিজ্ঞানের পথ ধরে। তাই সেই মানুষটির বিশাল প্রতিভা তাদের কাছে সহ্যাতীত ঠেকেছিল যারা পচাগলা ভাবরাজ্যের পদতলে কোন যুক্তি ছাড়াই মাথা বিকিয়ে দিয়েছে আর ভড়াটিয়া কিলারদের দিয়ে হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছে। বোকারা জানে না অভিজিতরা একা নয়, তারা একা একা আর এক থাকবে না। তাঁরা একদিন হিসাব চাইবে।
অভিজিৎ জানতো আক্রমণ আসবে। সে মারসেনারী নয়, সে মাঠের ফ্রন্টাল যোদ্ধা। তাকে কি করতে হবে সে খুব ভালো করে জানতো। তার জানা বাকী ছিল না যে প্রযুক্তিগত উন্নতির ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের চর্চা এবং শিল্প-সাহিত্য-মূল্যবোধ,--মানুষের ভাব্রাজ্যের প্রতিটি ক্ষেত্রে অধ্যাত্মবাদের চর্চা দেশে পুরোপুরি ফ্যাসিবাদ গড়ে ওঠার ঈঙ্গিতই বহন করছে কেননা ইদানীংকালে ফ্যাসিবাদ হচ্ছে আধুনিক বিজ্ঞান আর অভ্যাত্মবাদের এক অদ্ভূত সংমিশ্রণ।
তাই, অভিজিৎ জেনেশুনে সাহসিকতার সাথে মধ্যমাঠ থেকে প্রতি-আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছিল। হি ইজ আ ফলেন কমরেড। অভিজিৎ শহীদ হয়েছে। শহীদের মর্যাদা তাঁর প্রাপ্য। তাঁকে ঊনমান্যতা দেবার সাধ্য কারো নেই।"
- শ্যামল ভট্টাচার্য

কী করে একটি হত্যাকাণ্ড বিভৎস মজা হয়ে ওঠে

 হুমায়ুন আজাদকে হত্যা করার পর ১১ বছর কেটে গেছে। রাজীব হায়দারকে মারা হয়েছে ২ বছর আছে। অভিজিতের মৃত্যুর পরে তিন দিন কেটে গেছে।

সরকার চুপ করে আছে। তারা কিছু বলে মৌলবাদীদের বিরাগভাজন হতে চায় না।  বিএনপি কিছু বলবে না। তারা মৌলবাদীদের মিত্রদল। জামায়াত মৌলবাদীদের মূল হোতা। এরশাদ কোনো দলের মধ্যে পড়ে না--স্রেফ পুঁতি দুর্গন্ধময় জীবানু মাত্র। আনু স্যার তেল গ্যাস থাকলে আছেন। তিনি খুব দ্বিধায় থাকেন--কোনটা আবার ভারতের পক্ষে চলে যায়। কোনটা আবার হিন্দুপক্ষের কথা হয়ে পড়ে। কোনটা আবার মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে  শক্তি যোগায়। এগুলো ঠিক তিনি পছন্দ করেন না। শুধু তেল গ্যাস-- আর গ্যাস তেল হলে তিনি আছেন। 

সিপিবি-বাসদের এখনো বাল্যদশা ঘোচেনি। এর আগেই তারা জুবুথুবু বুড়ো হয়ে যাচ্ছেন। বাড়তি একটা লেফ তোষক দরকার। ড: কামাল হোসেনের সবার আগে দরকার জামাইকে বাঁচানো। বেচারা একটু বেয়াদ্দব।  কিন্তু তবু তো জামাই। খুশি রাখা দরকার। কাদের সিদ্দিকী মাসখানেক অফিসের সামনে কোলবালিশে হেলান দিয়ে আছেন। তিনি তাঁর দিগন্ত টিভির চাকরিটা ফেরত চান।  তিনি এ জগতে টাকা চান। পরজগতেও টাকা চান। টাকা ছাড়া আর কোনো কথা নেই। দিগন্ত টিভি মরজগৎ ও পরজগতের টাকা প্রাপ্তির একমাত্র পরীক্ষিত উপায়। ড: ইউনুস বেচারার নোবেল ছাড়া মনে আর কিছু নেই।  আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ পণ্ডিত মানুষ। পণ্ডিতদের বাণী দেওয়া ছাড়া আর কোনো কাজ থাকতে পারে না।  

আনিসুজ্জামান স্যারের অনেক কাজ। অনেক মিটিং সেমিনারের সভাপতিত্ব করা বাকী আছে। সবার উপরে আছে প্রথম আলোর দায়। ফলে তিনি এই বুড়ো বয়সে এতোটা সময় দিতে পারবেন না। সৈয়দ শামসুল হক সাহেব সবার উপরে কবি। শেষ বয়সে সময় নষ্ট না করে খেলা রাম খেলে যা'র আরেকটা সিক্যুয়াল লিখতে পারলে মন্দ হয় না।  বাংলা একাডেমীর চাকরি চলে গেলে প্রথম আলোর চাকরিটা নিশ্চিত করতে শামসুজ্জামান খানকে একটু বেশি সময় দিতে হচ্ছে। মুহাম্মদ আব্দুস সামাদ ঠিক কবি না মাইকম্যান সেটা এখনো ঠিক করতে পারেননি। 

নাসিরুদ্দিন বাচ্চুকে সন্ধ্যার পরে ফরহাদ মজহারের সঙ্গে একটু আড্ডায় বসতে হয়। লোকটা পুরনো বন্ধু। এখন হেফাজতের গুরু। তাকে হাতে রাখা দরকার। আবার পোলাপানের সঙ্গেও না থাকলে চলে না। একটা জগাখিচুড়ি অবস্থা। এখন আবার বয়স বাড়ছে।

এ ধরনের  আর যারা আছেন বা থাকছেন অথবা যাদের  থাকা দরকার,  তাদের জন্য মাঝে মাঝে 'লড়াই লড়াই লড়াই চাই' বলে গলা সাধাটা নিয়তি। ফলে অভিজিতের রক্ত বৃথা যেতে দেবো না। রাজীবের রক্ত বৃথা যেতে দেবো না। হুমায়ুন আজাদের রক্ত ইটের মত শক্ত। এই ইট দিয়ে একটা পোক্ত বাড়ি বানাবো। সেখানে কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুমাবো। আর উঠে এক ফাঁকে চেঁচিয়ে বলবো--সব কিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে।  মানি না মানবো না ইত্যাদি। অভিজিৎ পর্বটা মিলিয়ে গেলে আরেকজন এক্স ওয়াই জেডের লাশ পড়বে। তখন আবার মিটিং মিছিল মানব বন্ধন করা যাবে। সেই আরেকটি লাশের জন্য অপেক্ষা।  এই এক বিভৎস মজা। মজা ছাড়া এ জীবন বৃথা।

ফলে অভিজিত হত্যার বিচার হলো কি হলো না,সেটার ব্যাপারে কারো কোনো দায় নেই। ওটা অভিজিতের বুড়ো বাবার দায়। রাজীবের হত্যার বিচারের ব্যাপারে উকিল, কোর্ট কাচারির ঝামেলা রাজীবের বাবার ঝামেলা। হুমায়ুন আজাদের মামলার কি হল কি হল না সেটা অনন্য আজাদ ছেলেটার দেখার দ্বায়িত্ব। বিচার যে থমকে আছে, বিচার যে হচ্ছে না  সে ব্যর্থতা রাষ্ট্র, রাজনীতিক, সংস্কৃতি কর্মী, কবি, শিল্পী বা মানবাধিকার কর্মীদের নয়--ব্যর্থতা আজাদ স্যারের ছেলেমেয়েদের অথবা ওয়াইফের। সো অভিজিৎ, আপনি মৌলবাদের বিরুদ্ধে লিখেছেন। আপনি মৌলবাদীদের হাতে খুন হয়েছেন। সেটা আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার। পারিবারিক বিষয়। আপনি মরেছেন বলে আমরা মাঠ গরম করার একটা ইস্যু পেয়েছি। এটা আমাদের বিষয়। আর কি? এবার ধরা যাক দুএকটা ইঁদুর আবার। 

তাহলে এই সব ধানাই পানাইয়ের কোনো মূল্য আছে? আছে। তবে সেটা খুবই সামান্য। বড়জোড় তিন থেকে এক সপ্তাহ।  একটু সা রে গা মা পা ধা নি সা।

কথা হল, অভিজিৎকে হত্যা করা করা হয়েছে। এটা একটা খুনের মামলা। তিনি আস্তিক কি নাস্তিক--সেটা বিষয় নয়। তিনি লেখক কি অলেখক সেটাও বিষয় নয়। তিনি যুক্তিবাদী কি অযুক্তিবাদী সেটা বড় কথা নয়। তিনি একজন মানুষ। এটাই বড় কথা। একজন মানুষ কর্তৃক আরেকজন মানুষকে হত্যা করাটা অপরাধ। রাষ্ট্রের দ্বায়িত্ব সে অপরাধীদের বিচার করা। শাস্তি দেওয়া। শাস্তি নিশ্চিত করে এই ধরনের অপরাধপ্রবণতাকে নির্মূল করা। রাষ্ট্র যাতে এই দ্বায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে সেজন্য সচেতন মানুষকে সোচ্চার থাকার পাশাপাশি আইনী প্রক্রিয়ার সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত থাকতে হবে। অভিজিৎ কেনো খুন হয়েছেন সেটা নিয়ে শুধু হৈচৈ করার মধ্যে দিয়ে কর্তব্য সমাধা করা মানে আরেকজন অভিজিৎ, রাজীব কিংবা হুমায়ুন আজাদের খুনের পথ করে দেওয়া। তাহলে কি করতে হবে?

করতে হবে এই হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার সমাধা করার ব্যবস্থা গ্রহণ। সেজন্য মিটিং মিছিল বিবৃতি কলাম লেখার পাশাপাশি একটা শক্তিশালী আইনজীবী সেল গঠন করা দরকার  যারা সর্বাত্মকভাবে লেগে থাকবেন কোর্টের পিছনে। মামলার পিছনে। কার্যকর আইনী লড়াই করে হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তির রায় আদায় করে ছাড়বেন। সেই রায় কার্যকর করার জন্য কাজ করে যাবেন। এর জন্য প্রয়োজনীয় আইনজীবী, লোকবল, অর্থ, সংগঠন গড়ে তুলতে হবে। এই কাজটি আছে আমাদের দেশে? নেই। যারা মাঠ গরম করছেন তাদের কি কোনো পদক্ষেপ আছে এই বিষয়ে? নেই রে ভাই--নেই। ওটা পশ্চিমী সংস্কৃতি।   

হত্যাকারীদের  দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা গেলে অভিজিৎদের মৃত্যু সত্যিকারে ঠেকানো যাবে। হত্যার বিচার না হওয়ার হত্যাকাণ্ডে আমরা অভ্যস্থ হয়ে যাচ্ছি। এটা এক ধরনের অসুস্থতা।এইভাবে অসুস্থতা করে তোলাও মৌলবাদীদের একটি পরিকল্পনা। এটা মৌলবাদীরা জানে--আমরা জানি না। 

এই দৃশ্য দেখলে হৃদয় বিদীর্ন হয় না, জলে চোখ ভরে যায় না এমন মানুষ হয়তো পাওয়া যাবে না কিন্তু অন্তত একটা পশুর সন্ধান পাওয়া গেছে যে অভিজিৎ রায় হত্যার তিন দিনের মাথায় অভিজিৎ রায়কে আক্রমন করেছে এইভাবেঃ

"ধর্মকে আক্রমণ করে কথা বলার মধ্যে কোন প্রগতিশীলতা নাই। আছে- নিজেকে বিতর্কিত তারকা বানানোর চেষ্টা। একজন প্রকৃত মানুষ কখনোই ধর্মের বিরোধিতা করে নিজেকে বিতর্কিত বানানোর প্রবণতায় থাকেন না। থাকেন তারাই- যারা যে কোন মূল্যে নাম কেনার জন্য, নিজেকে নিরাপদ প্রবাসী বানানোর জন্য আর কোন হাতিয়ার পান না- তারা। ব্লগে বা ফেসবুকে যারা ধর্মকে আক্রমণ করে লেখে নিজেদের তারকা বানাতে চান, তারা কখনোই প্রকৃত মানুষ তথা মুক্তবু্দ্ধির মানুষ নন। আর এই লোকেরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছেন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের।"
অভিজিৎ রায় নাকি ধর্মের বিরোধিতা করেছিলেন যে কোন মূল্যে নাম কেনার জন্য, নিজেকে নিরাপদ প্রবাসী বানানোর জন্য

অপশক্তিকে প্রতিহত করার একমাত্র উপায়- সকল দুর্বলতা ত্যাগ করে শুভ শক্তির অন্তর্নিহিত শক্তিকে জাগ্রত করে অসত্য, অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করা-সত্যের বিজয় অবশ্যসম্ভাবী!
কোটি মানুষের নানা ধর্ম, হাজারো মতামত। সবার চিন্তা,সবার বিশ্বাস এবং অনেকেরই ধর্ম ভিন্ন। নিজের মত প্রকাশের স্বাধীনতা যেমন আছে সবার আবার সেই মতের সাথে দ্বিমত ও থাকবে অনেকের,থাকবে তর্কের অবকাশ-সেটাই স্বাভাবিক।
কিন্তু মতের মিল না হলেই কারো প্রান কেড়ে নিতে হবে-এমন কোনো কথা কোনো ধর্ম গ্রন্থে লেখা আছে বলে আমার জানা নাই। এমনটা কোনো মতেই হওয়া উচিত নয়-এর তীব্র প্রতিবাদ জানানোই যে কোনো ধর্মপ্রান মানুষের কর্তব্য বলেই আমার মনে হয়!
একই সঙ্গে এটাও না বললেই নয়-কেউ নিজে ধর্ম মানেন না বলে বা কোনো বিশেষ ধর্মকে পছন্দ করেন না বলেই কোনো ধর্মকে অবমাননা করার বা কটুক্তি করার অধিকারও কারো থাকতে পারে না! কারো ধর্মানুভুতিতে আঘাত করা অবশ্যই নিন্দনীয়!
ধর্ম মানা অথবা না মানার অধিকার প্রতিটি মানুষের নিজস্ব সিদ্ধান্ত! সেজন্য কাওকে বিচার করার বা শাস্তি দেয়ার অধিকার কোনো মানুষের উপর স্ষ্টিকর্তা আরোপ করেছেন বলে মনে হয় না! ধর্ম বিধাতার সৃষ্টি-কেউ যদি তার প্রেরিত ধর্ম বা ধর্মগ্রন্থকে অস্বিকার করে, অবমাননা করে, তার বিচারের ভার কি সৃষ্টিকর্তার উপর নয়?এবং সেটা উনি অবশ্যই করবেন!
অন্যকে নয় শুধুমাত্র নিজেকে সংযত রাখার ও সংশোধন করার এবং আত্ম সমালোচনা করার নির্দেশই আল্লাহতায়ালা প্রতিটি মানুষের জন্য দিয়েছেন। সবাই সেটা মেনে চললেই পৃথিবীর অনেক সমস্যারই হয়ে যেত!
জাতি,ধর্মের উর্ধে যেয়ে মানুষকে শুধুমাত্র মানুষ হিসাবেই ভালোবাসতে পারার মধ্যেই মানব জন্মের সার্থকতা! সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই!
ফেসবুকে অভিজিৎ রায়ের কন্যা তৃষা আহমেদ যা লিখলেন !
'তিনি আমাকে যা শিখিয়ে গেছেন, যে ভালোবাসা দিয়ে গেছেন তা আমি সবসময় মনে রাখব। আমি তোমাকে খুবই ভালোবাসি বাবা। প্রতিটি জিনিসের জন্যই তোমাকে ধন্যবাদ।'
ফেসবুকে নিজের অনুভূতির কথা এভাবে ব্যক্ত করেছেন দুর্বৃত্তের হামলায় নিহত অভিজিৎ রায়ের কন্যা তৃষা আহমেদ।
তিনি এই খুনের জন্য 'ইসলামী মৌলবাদীদের' দায়ী করে লেখেন, ইসলামী মৌলবাদীরা তাকে ছুরির আঘাতে হত্যা করেছে। ওই ঘটনায় আমার মা-ও গুরুতর আহত হয়ে বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
তৃষা এই হত্যাকাণ্ডের পর নিজের মানসিক অবস্থার বিষয়ে জানান, যদি বলি এই ঘটনায় আমি আতঙ্কিত বা মর্মাহত, তাহলে কম বলা হবে।
তিনি পরিস্থিতি 'যত খারাপ হোক না কেন' পৃথিবীকে 'ভালো' জায়গায় পরিণত করতে 'যুক্তির লড়াই' শেষ হয়ে যাবে না বলে মন্তব্য করেন।
তৃষা আহমেদ বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। তিনি আটলান্টার একটি স্কুলে পড়াশোনা করছেন।
তৃষা নিজের জীবনে অভিজিৎ রায়ের অবদানের কথা স্মরণ করতে গিয়ে জানান, আমার বয়স যখন ছয় বছর, তখন আমার মায়ের সঙ্গে সম্পর্কের শুরু তার। এর পরের ১২ বছরে ক্রমে তিনি আমার বন্ধুতে, আমার নায়কে, আমার আদর্শে, বিশ্বস্ত নির্ভরতায়, আমার নাচের সঙ্গীতে এবং আমার বাবায় পরিণত হন।
নিজের বাবার পরিচয় তুলে ধরতে গিয়ে তিনি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে উল্লেখ করেন, আমার বাবা ছিলেন একজন বিশিষ্ট লেখক। বিজ্ঞান এবং নিরীশ্বরবাদ বিষয়ে লেখার জন্য মূলত তিনি পরিচিত ছিলেন।
তৃষা জানান, তিনি আমাকে কখনোই প্রচলিত শান্তশিষ্ট অথবা বিনয়ী হতে বলেননি। তিনি আমাকে শিক্ষিত, উদ্যোগী এবং সাহসী হতে শিখিয়েছেন।
তিনি জানান, তার বাবা এবং মা এবারের বইমেলায় কয়েকটি বই প্রকাশের জন্য গত সপ্তাহে বাংলাদেশ যান।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক মিলনায়তনের (টিএসসি) সামনে অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে হত্যা করে দৃর্বৃত্তরা। তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাও মারাত্মক আহত হন।
অভিজিৎ রায় 'মুক্তমনা' নামে একটি ব্লগ সাইটের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। বন্যাও বিভিন্ন ব্লগ সাইটে লেখালেখি করতেন।

নাস্তিক মযহার কোপ খায় নি কেন আজও ------ 
অভিজিৎ নাস্তিক ছিল তাই তাকে হত্যা করা হয়েছে এমন কথা আলোচিত হচ্ছে ! ব্যাপারটা কি আসলেই তাই? যদি নাস্তিকতার অভিযোগে তাকে হত্যা করা হয় তাহলে ফরহাদ মযহারের মত স্বঘোষিত নাস্তিক কিভাবে বহাল তবিয়তে এখনও বেঁচে আছেন !!! কেন তাকে কখনই মৌলবাদীরা কোপানোর চেষ্টা কোন কালে করে নাই?
মৃত পিয়াস করিম বিভিন্ন টক-শোতে এসে নিজেকে নাস্তিক বলে দাবী করেছিলেন। তাকে কি কোপানো হয়েছিল? অসংখ্য রাজনীতিবিদ আছেন যারা নাস্তিক। বিশেষ করে যারা বাম রাজনীতি করেন। নাস্তিকতার অভিযোগে তাদের তো কোপাতে দেখি নাই কোন কালে। লেফটেলেন্ট লতিফ মিডিয়াতে বসে মহানবীর সাথে ম্যান্ডেলার তুলনা দিয়েছিলেন !!! কেন তার বিরুদ্ধে সোচচার হয় নি মৌলবাদীরা? আসিফ নজরুল মিডিয়ায় বসে বলেছিলেন, মহানবীও ভুল করেছেন, তার সমালোচনা আমরা করতে পারি !!! কেন আসিফ নজরুলের কল্লা চাইলো না মৌলবাদীরা? অথবা বেগম জিয়া। বুকে হাত দিয়ে কেউ বলতে পারবেন তিনি কোন ধর্ম মানেন? কই তাকে তো মৌলবাদীরা কোপায় না !!!
বিষয়টা শুধু নাস্তিকতা নয়। বিষয়টা স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলা। দেশের প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসা, গভীর মমত্ববোধ। এবং বিজ্ঞানমনস্ক আধুনিক ধ্যান ধারনায় সমাজকে নিঃস্বার্থ ভাবে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।
যারা সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চায় অপশক্তি তাদের বারবার পেছন দিকে টেনে নেবার হীন প্রয়াস চালাতে হুমকী-ধামকি পরিশেষে নির্মম হত্যাকান্ড চালায়। courtesy Nasrin Haque!

No comments: